করোনার ভ্যাকসিন আসছে এ বছরই!
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আসছে ‘এ বছরই’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ভ্যাকসিন তৈরিতে হোয়াইট হাউসের একদল বিজ্ঞানী অপারেশন ওয়ার্প স্পিড নামে একটি প্রকল্পও গ্রহণ করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা করোনার সম্ভাব্য ১৪টি ভ্যাকসিন শনাক্ত করে তা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
এদিকে করোনার ওষুধ চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। রোববার ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তার দেশের গবেষকদের প্রচেষ্টায় চলতি বছরই টিকা আবিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সারা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও এই চেষ্টায় যুক্ত আছে; যেমন: যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় এ ব্যাপারে গবেষণার জন্য অর্থ ঢালছে ওয়াশিংটন।
এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, যদি অন্য কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে আগে টিকা আবিষ্কার করে ফেলে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, আমি বিষয়টি ভাবছি না। আমি শুধু একটি টিকা পেতে চাই, যা কাজে দেবে। আমি সত্যিই বিষয়টি সেভাবে পাত্তা দিচ্ছি না যে, এটি যদি অন্য কোনো দেশও করে। আমি নিজের টুপি তাদের কাছে নিয়ে যাব। আমাদের আসলে একটি টিকা দরকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এগিয়ে আছে।
যে দেশই টিকা আবিষ্কার আগে করতে পারবে, সে দেশই অর্থনৈতিক তো বটেই কূটনৈতিকভাবেও তার ফায়দা আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করবে। যদিও চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীন অনেকটাই এগিয়ে আছে। কারণ, চীনই প্রথম করোনাভাইরাস নিয়ে জানতে শুরু করে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বহু কর্মকর্তা মনে করেন, চীন সবার আগে এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা শুরু করেছে। অন্য দেশগুলো টিকা আবিষ্কারের পথে কতদূর এগিয়েছে, সেই তথ্যও চীন চুরি করার চেষ্টা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা সে দেশের চিকিৎসক থেকে শুরু করে গবেষকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তাদের গবেষণার তথ্য চুরি করার জন্য কম্পিউটার হ্যাক করার চেষ্টা করতে পারে চীনের হ্যাকাররা। সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার কথাও বলা হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফউসি এনবিসি নিউজকে বলেছেন, এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে একটি ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, উৎপাদন শুরু করার আগ পর্যন্ত আপনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবেন না। ঝুঁকি নিয়েই এর উৎপাদন শুরু করতে হবে। ধরে নিতে হবে, এই ভ্যাকসিন কাজ করবে। তারপর উৎপাদন বাড়াতে হবে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। রোববার হোয়াইট হাউসের করোনা মোকাবেলায় গঠিত কমিটির সমন্বয়ক ডা. দেবোরাহ বার্কস বলেন, কাগজে-কলমে জানুয়ারির আগে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়া কঠিন। তবে এ জন্য সঠিকভাবে সব কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া দরকার।
আগামী বছর শুরুর আগে করোনার একটি ভ্যাকসিন পাওয়া কতটা বাস্তবসম্মত- এমন প্রশ্ন করা হলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন তৈরিতে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৮ মাস সময়ের দরকার। মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে প্রথমবারের মতো মানবদেহে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল এখনও আসেনি। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন দিতে পারে।
কিন্তু আদৌ এই ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারবে কি না, সেটি জানতে চূড়ান্ত ফল না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। উহান ল্যাব থেকে করোনাভাইরাস আসার প্রমাণ আছে : করোনাভাইরাস এসেছে চীনের উহান ল্যাবরেটরি থেকে। এ বিষয়ে ‘উল্লেখযোগ্য প্রমাণ আছে’ বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ট্রাম্পের কথারই যেন প্রতিধ্বনি শোনা গেল তার কণ্ঠে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এসব মন্তব্য।
এবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পম্পেও বলেন, চীনের উহানের একটি ল্যাবরেটরি থেকে এটা (করোনাভাইরাস) এসেছে। এর পেছনে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে। সেরা বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত দৃশ্যত ভাবছেন, এটা মনুষ্যসৃষ্ট। এই সময়ে তাদের এই মতামতকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
‘ওষুধ পেয়েছে’ পাকিস্তান : করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কেইউ) ডা. পাঞ্জওয়ানি সেন্টার ফর মলেকিউলার মেডিসিন অ্যান্ড ড্রাগ রিসার্চের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তারা করোনাভাইরাসের ওষুধ চিহ্নিত করতে পেরেছেন। পিসিএমডি এ বছরের ফেব্র“য়ারি থেকে করোনার ওষুধ নিয়ে গবেষণা শুরু করে।
সম্প্রতি ‘জার্নাল অব বায়োমলেকিউলার স্ট্রাকচার অ্যান্ড ডায়নামিক’-এ তাদের গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, রেমডেসিভির, স্যাকুয়েনাভির, ডারুনাভির এবং আরও দুটি প্রাকৃতিক উপাদান কোভিড-১৯-এর সম্ভাব্য ওষুধ।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.