মুম্বাই তারকাদের রহস্যময় আত্মহত্যা!
রঙিন আলো-ঝলমল দুনিয়ার তারকাদের জীবন বরাবরই বৈচিত্র্যময়। তবে, হঠাৎ করেই সেলিব্রেটিদের এতো সাধনার জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া সবাইকে হতবাক করে দেয়। পূর্বে থেকেই বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ঘটেছে অনেক রহস্যময় আত্মহত্যা। সেসব আত্মহত্যা ছিল নাকি খুন, সেটাও রহস্যাবৃত। সেসব নিয়ে আমাদেদর আজকের প্রতিবেদন।
দিব্যা ভারতী
বলিউড সুন্দরী দিব্যা ভারতী। খুব বেশিদিন কাজ করার সুযোগ হয়নি তার। এক বছরে তার একডজন ছবির রেকর্ড আজও ভাঙতে পারেনি কেউ। দিব্যার মৃত্যু হয় মাত্র ১৯ বছর বয়সে। ১৯৯৩ সালের ৭ এপ্রিল নিজের ভারসোভার ফ্ল্যাট থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তার। দিব্যা বিয়ে করেছিলেন বিখ্যাত প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াওয়ালাকে। ওই দিন তাঁদের ফ্ল্যাটে ফ্যাশন ডিজাইনার নীতা লুল্লাসহ আরও বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব এসেছিলেন। চলছিল রাত-পার্টি। এমন সময়ে বাড়ির ব্যালকনি থেকে পড়ে মারা যান তিনি। পরিবার থেকে বলা হয়েছিল, টাল সামলাতে না পেরেই পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে শোনা গিয়েছিল দুর্ঘটনা নয়। পরিকল্পিত খুন। কিন্তু প্রমাণ মেলেনি। তাই কিছু বছর পর দিব্যার মৃত্যুর তদন্তও পুলিশ বন্ধ করে দেয়। তার আত্মহত্যা নিয়ে রহস্যের জট এখনো খুলেনি। সেটা এখনো রহস্যাবৃত।
পারভীন ববি
বলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী পারভিন ববি। তিনি ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারী মারা যান। তবে সেটা আত্মহত্যা নাকি খুন-তার জট এখনো খুলেনি। আশির দশকের এই বলিউড সুন্দরীর শেষ জীবন কেটেছে বড়ই কষ্টে। অত্যধিক মদ্যপান, সম্পর্কে ভাঙন তাকে ব্যক্তিগত জীবনে সুখী হতে দেয়নি। এক সময় পুরুষ হৃদয়ে তুফান তোলা পারভিনের মৃত্যুদিন যে কবে, তা জানেন না কেউ। ফ্ল্যাটের দরজার সামনে খবরের কাগজ আর দুধের প্যাকেট জমছিল দিনের পর দিন। সন্দেহজনকভাবে প্রতিবেশীরাই পুলিশে খবর দেন। ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙা হয়। উদ্ধার করা হয় মৃত পারভিনকে।
সিল্ক স্মিতা
সিল্ক স্মিতার ক্যারিয়ার শুরু আইটেম গার্ল হিসেবে। সেখান থেকে অভিনেত্রী হয়ে উঠতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু মুম্বাইয়ের নিজের আবাসনে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। কেন করেছিলেন আত্মহত্যা? হতাশা, বিচ্ছেদের যন্ত্রণা নাকি অন্য কিছু-জানা যায়নি আজও। শ্রীদেবী ‘হাওয়া হাওয়াইকন্যা’ শ্রীদেবী। ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীদেবী মারা যান। দুবাইয়ের এক সাততারা হোটেলের বাথটাব থেকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এই বলিউডদিভাকে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করেন। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে লেখা ছিল, ‘জলে ডুবে মৃত্যু।’ যদিও খুনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু বনি কাপুর পরিবার এটি মানতে নারাজ ছিলেন। বাথটবের জলে তিনি কীভাবে মারা গেলেন তা আজও রহস্যময় ও অস্পষ্ট!
গুরু দত্ত
‘কাগজ কে ফুল’ খ্যাত এই অভিনেতা-পরিচালক খুবই কম বয়সে মারা যান। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে। মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করার কারণে নাকি মৃত্যু হয়েছিল। মূল কারণ জানা যায়নি। তার মৃত্যু আজও রহস্যাবৃত। তবে, তার ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, মৃত্যুর আগের দিনও বেশ হাসিখুশি ছিলেন গুরু। আত্মহত্যা, নাকি ভুলবশত ওভারডোজ? আজও জানা যায়নি।
জিয়া খান
মাত্র ২৫ বছর বয়সে এই বলিউড সুন্দরী জুহুর ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেছিলেন। সময়টা ছিল ২০১৩ সালের ৩ জুন। অভিযোগ উঠেছিল তার সেই সময়ের বয়ফ্রেন্ড সুরুজ পাঞ্চোলির বিরুদ্ধে। জিয়া যখন আত্মহত্যা করেন, তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। জিয়ার মা দাবি করেছিলেন, পরিস্থিতির চাপে পড়ে জিয়া বাধ্য হয়েছিলেন এমন একটা চরম সিদ্ধান্ত নিতে। জিয়ার ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল সুইসাইড নোট। অর্চনা পাণ্ডে ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ের ভারসোভাতে নিজ ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় মডেল অর্চনা পান্ডের। তার ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়। বয়ফ্রেন্ড ওমর পাঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন অর্চনা।
নাফিসা জোসেফ
২০০৪ সালের ২৯ জুলাই ‘বিউটি কুইন’ও ভিজে নাফিসার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় মুম্বাইয়ে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে। ব্যবসায়ী গৌতম খান্ডুজার সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথা পাকাপাকি হয়েও ভেস্তে যায়। এর পরই অবসাদে চলে যান নাফিসা এবং আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
কুলজিৎ রণধাওয়া
মডেল কুলজিতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ২০০৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। জুহুতে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দেহ উদ্ধার হয়। হিপ হিপ হুররে, কোহিনূরের মতো জনপ্রিয় শোতে ছিলেন তিনি। সুইসাইড নোটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে মানসিক চাপের কথা উল্লেখ ছিল।
বিবেকা বাবাজি ভারতের অন্যতম সেরা মডেল ছিলেন বিবেকা। তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। ঘর থেকে পাওয়া একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল-আই কিল। সন্দেহ করা হয়, বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে মনোমালিন্যেই মূল কারণ।
কুনাল সিংহ
কুনাল সিংহ ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা। ‘দিল হি দিল ম্যায়’ ছবির অভিনেতা। ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। যদিও অভিনেতার বাবার দাবি, কুনালকে খুন করা হয়েছে।
মনমোহন দেশাই
পরিচালক মনমোহন দেশাই। তিনি বাড়ির ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। অনেকের দাবি, ফিল্মি ক্যারিয়ারে অসাফল্যের জন্যই আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবে আরেকটি তথ্য ছিল, পিঠের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরেই এই আত্মহত্যা।
সুশান্ত সিং রাজপুত
বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৪ জুন, ২০২০ রবিবার দুপুরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো তার আত্মহত্যার খবর প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, লকডাউনের সময়টায় একাই বাসায় অবস্থান করছিলেন ৩৪ বছর বয়সী অভিনেতা সুশান্ত। কেন, কোন পরিস্থিতিতে পরে এমন আত্মহননের পথ বেছে নিলেন এই অভিনেতা তা এখনো জানা যায়নি। সেটা এখনো রয়েছে রহস্যময়! এটি আত্মহত্যা নাকি খুন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সুশান্তের পরিবার থেকেও এটিকে খুন হিসেবে বলা হয়েছে। এরই মাঝে শেষ হয়েছে তার ময়নাতদন্ত। মুম্বাইয়ের ড. আরএন কুপার মিউনিসিপ্যাল জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছে সুশান্তের। তার শরীরে কোনো ড্রাগ বা বিষ রয়েছে কিনা তা মুম্বাইয়ের জেজে হাসপাতালে পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।
তবে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন বলে জানানো হয়েছে। এদিকে মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চের একটি টিম ইতিমধ্যেই সুশান্তের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ সুশান্তের ফ্ল্যাটের বিভিন্ন প্রান্ত খতিয়ে দেখছে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই সুশান্তের প্রাক্তন সহকারী ১৪ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। যার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছিলেন সুশান্ত নিজেই। ২০০৯-এ ‘পবিত্র রিস্তা’ সিরিয়ালে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় শুরু। তার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টেলিভিশন থেকে বলিউডে পা রেখেছিলেন ‘কাই পো চে’-র মাধ্যমে। বাণিজ্যিকভাবে সে ছবি সফল। পছন্দ হয়েছিল ফিল্ম ক্রিটিকদেরও। এর পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বায়োপিক ‘ধোনি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ সুপার হিট। বলিউডে প্রতিষ্ঠা পেল সুশান্তের ক্যারিয়ার। তার পর একে একে ‘রাবতা’, ‘কেদারনাথ’, ‘পিকে’, ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’, ‘ছিঁচোড়ে’র মতো মুভিতে অভিনয় করেছেন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.