সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    :সুলতান ফাতিহ এর আয়া সোফিয়া!

    ঐতিহাসিক 'আয়া সোফিয়া'-কে পুনরায় ...

    ১৪৫৩ সালের ২৯ মে। সদ্য কুড়ি পেরোনো তুর্কি সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিশ্রুত রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে প্রবেশ করলেন।

    ইতোপূর্বে ২৯ বার নানা জাতির নানা রাজা/সম্রাট সহস্রাধিক বছরের পুরনো রাজধানী দখলের চেষ্টা করেছেন, এমনকি দ্বিতীয় মুহাম্মদের পূর্বে তারই জাতির নৃপতিরা ১৭ বা ১৮ বার চেষ্টা করেছেন, সফল হননি।

    দ্বিতীয় মুহাম্মদ পেরেছেন, তাই তিনি ফাতিহ বা নগরদোর উন্মোচনকারী।

    যুদ্ধের পূর্বে সুলতান কয়েকবার দূত পাঠিয়ে চুক্তি সম্পাদনের আহ্বান জানিয়েছেন বাইজেন্টাইন সম্রাট একাদশ কনস্ট্যান্টাইন ড্রাগাসেসকে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। ফলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

    বলপূর্বক নগর জয় ও চুক্তিভিত্তিক নগর জয়ে ফলাফলের দৃষ্টিতে বহু পার্থক্য রয়েছে। যুদ্ধের মাধ্যমে কোন শহর বিজিত হলে সেটির ভাগ্য সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে বিজয়ী সেনাপতির মর্জির ওপর। কিন্তু চুক্তির ক্ষেত্রে অনেক কিছু রক্ষা করা যায়। তবে সুলতান ফাতিহ বিজিত খ্রিস্টানদেরকে এমন বহু অধিকার দিয়েছেন; যার নিশ্চয়তা চুক্তির মাধ্যমেও পাওয়া যায় না।

    তিনি অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্খকে মন্ত্রীর মর্যাদা দিলেন, গির্জায় সমবেত হয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে নিয়মিত প্রার্থনা করার অনুমতি দিলেন। ধর্মযাজকদের ওপর হতে জিযিয়া কর মওকুফ করলেন।

    কনস্ট্যান্টিনোপলের– যার নতুন নাম ইস্তাম্বুল– বহু খ্রিস্টান বাসিন্দা যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। অনেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে নগরের জনসংখ্যা কমে যায়। অচিরেই রোমেলি ও আনাতোলিয়া থেকে বহু নাগরিক এনে তাদেরকে ইস্তাম্বুলে বসবাস করানো হয়।

    স্বাভাবিকভাবেই নতুন তুর্কি রাজধানীতে মুসলিমরা সংখ্যাগুরু ও খ্রিস্টানরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। ফলে উপাসনালয়ের সংখ্যায়ও পরিবর্তন আসে। জনমিতির পরিবর্তনে ভারসাম্য সৃষ্টির জন্য প্রায় অর্ধেক গির্জাকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়।


    অবশিষ্ট চার্চে খিস্টানদের উপাসনা করার অনুমতি দেয়া হয়। বাইজেন্টাইন আমলে প্রতিষ্ঠিত ও তুর্কিদের সহায়তায় পুনর্নিমিত কিছু চার্চ এখনো বিদ্যমান আছে ইস্তাম্বুলে। যেমন ১৩৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত সেইন্ট গ্রেগরি দ্য ইল্যুমিনেটর চার্চ অব গালাটা এবং ১২৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত চার্চ অব সেইন্ট মেরি অব মঙ্গলস(১২৮১)। উসমানীয়দের আমলে প্রতিষ্ঠিত চার্চগুলোর কথা বাদ দিলাম।

    ব্যতিক্রমী আয়া সোফিয়া

    আয়া সোফিয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। চতুর্থ শতকে নির্মিত এই গির্জা ছিল কনস্ট্যান্টিনোপলের সবচেয়ে বড় চার্চ ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। সেই যুগে এশিয়া ও ইউরোপের প্রতিদ্বন্দ্বী সাম্রাজ্য ও সালতানাতসমূহে ধর্মের প্রভাব ছিল খুব বেশি। মুসলিম আইনশাস্ত্র (ফিকহ) অনুযায়ী কোন মুসলিম শহরে অমুসলিমদের জৌলুসপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা থাকবে না, যা মসজিদের চেয়ে বৃহৎ ও অধিক দৃষ্টিগোচর।

    অতএব আয়া সোফিয়াকে চার্চ হিসেবে বহাল রাখার সুযোগ ছিল না। একটা উপায় ছিল ভেঙে ফেলা। কিন্তু এরচে’ উত্তম বিকল্প হল মসজিদে রূপান্তর। তাই (বহু সূত্রমতে) সুলতান খ্রিস্টানদের কাছ থেকে আয়া সোফিয়া কিনে নিয়ে স্থাপনাটি মসজিদে রূপান্তর করেন। ১৪৫৩ সালের ১ জুনে মসজিদে রূপান্তরিত আয়া সোফিয়ায় প্রথমবারের মত জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ইমামতি করেন ফাতিহ-এর শিক্ষক শায়খ আক শামসুদ্দিন।

    ইস্তাম্বুল ও গ্রানাডা
    অনেক মানুষ যারা নিজেদেরকে চিন্তক, ভাবুক ও জ্ঞানী মনে করে তারা ফাতিহ-এর এহেন কাজকে ধর্মীয় স্বাধীনতার সংকোচন বলে মনে করেন। কিন্তু তারা বিবেচনা করে দেখেন না যে এটি পঞ্চদশ শতকের ঘটনা, ওই সময় আশেপাশের রাজ্যগুলোতে কী ঘটেছিল।

    কনস্ট্যান্টিনোপলের পতনের ৪০ বছরের মাথায় গ্রানাডার পতন হয়। এটি ছিল সর্বশেষ স্পেনীয় শহর; যেটি মুসলমানদের হাতে ছিল। ইস্তাম্বুলের মত যুদ্ধ করে এটি জয় করেনি ফর্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলা; বরং চুক্তির মাধ্যমেই দেশ ছেড়েছিলেন বানুল আহমারের শেষ আমির আবু আবদুল্লাহ।

    বলা বাহুল্য, বহু মুসলিম গ্রানাডায় থেকে যেতে বাধ্য হয়। কেউ কেউ খ্রিস্টান হয়ে যায়, অনেকে বিপদের মুখেও ধর্মীয় পরিচয় বহাল রাখে। ৪৭ দফার চুক্তিতে বলা হয়েছিল, মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা বহাল রাখা হবে। শুধু তাই নয়, তাদের পারিবারিক আইন চর্চার জন্য কাজি নিয়োগ দেয়া হবে, মাদ্রাসাও চালানো যাবে।

    অচিরেই একতরফাভাবে চুক্তি খণ্ডবিখণ্ড করা হয়েছে, গ্রানাডার গ্রান্ড মসজিদ তো বটেই, ছোটখাট মসজিদও গির্জায় রূপান্তরিত হয়। বৃথা হয়ে যায় মুসলিমদের প্রতিরোধ, ইনকুজিশনের কাহিনী কে না জানে!

    পঞ্চদশ শতকে কাছাকাছি সময়ে সংঘটিত দুটো ঘটনা পর্যালোচনা করলে তুর্কি সুলতান মুহাম্মদ আল-ফাতিহ-এর কর্মনীতির যৌক্তিকতা, বরং ন্যায়পরায়নতা উপলব্ধ হবে।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !