সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    যেসব নিষেধাজ্ঞা ইসলাম সমর্থন করে না!


    নিষিদ্ধ দেশ তিব্বত এবং নিষিদ্ধ নগরী লাসার গল্প হয়ত জীবনে অনেকবারই শুনেছেন। কিন্তু আজ যে শহরের গল্প বলব সেটি গণচীনের তিব্বত বা লাসা নয়। সেটি আমাদের ঢাকা!   হ্যাঁ! ঢাকার কথাই বলছি। প্রতিদিন চলার পথে কত রকমের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয় আমাদেরকে। সব নিষেধাজ্ঞাই কী ইসলাম সমর্থন করে! সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজব আজকের লেখায়!  

    অতিথির গাড়ি পার্কিং নিষেধ: 

    সাধ্যের সবটুকু দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রেওয়াজ এই শহরে সবসময়ের। কিন্তু ইদানিং অতিথি সঙ্গে নিয়ে আসা শখের গাড়িটিকে বাড়তি বোঝা হিসেবে ধরে নিয়েছেন গড়পড়তা সব বাড়িওয়ালাই।  তাইতো রাজধানীর প্রায় অধিকাংশ বাড়ির প্রধান ফটকে বড় হরফে ঝুলানো থাকে, ‘অতিথির গাড়ি পার্কিং নিষেধ।’  

    যে অতিথির জন্য আপনি পোলাও-বিরিয়ানী তৈরি করে প্রতিক্ষার প্রহর গুণেন- পরোক্ষ সে অতিথি বাসায় ঢুকার আগেই তার প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিচ্ছেন! এটা মেহমানের প্রতি কত বড় অবজ্ঞা ও অপমানজনক।  আজ সেই অনুভূতিও হারিয়ে ফেলেছে পাথরের এই শহর। অথচ একজন মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব মেহমানকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।  

    শুধুই মজাদার খাবার খাওয়ানোর নামই যে মেহমানদারি নয় রাসূল (সা.) সেই আদর্শও আমাদের সামনে উপস্থাপন করে গেছেন।  একবার রাতের বেলা এক ইহুদি মেহমান প্রকৃতির বেগ সংবরণ করতে না পারায় বিছানা নোংরা করে ফেললে স্বয়ং রাসূল (সা.) নিজ হাতে সেই বিছানা ধৌত করেন। সেই নবীর উম্মত আমরা, একজন অতিথির একটি গাড়ি এক-দু ঘন্টা আমার বাড়িতে থাকবে সেটাও মেনে নিতে পারি না।  

    প্রিয় নবীজি (সা.) জীবনে বহুবার অতিথি আপ্যায়ন করতে যেয়ে স্বপরিবারের উপোস করেছেন এগুলো তো আমাদের কাছে কল্পকাহিনিই মনে হবে!  পরিকল্পিত নগর জীবনে প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে চারপাশের রাস্তা ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় এক ভবন থেকে আরেক ভবনের মাঝে পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। আইনের বাধ্যবাধকতায় আমরা তাই করি। আহা! মানুষের কল্যাণে। নবীজির ভালবাসায়। আমরা যদি প্রতিটি ভবনে অতিথির গাড়ির জন্য সামান্য একটু জায়গা নির্ধারিত করে রাখতাম। তাহলে কতই না সুন্দর হতো। নবীজি সা. খুশি হতেন। আল্লাহর কাছে নিশ্চয়ই আমরা এর উত্তম বিনিময় পেতাম।  

    এখানে পেশাব করা নিষেধ: আমাদের যাপিত জীবনের খুবই কমন একটি শিরোনাম। মন্ত্রীপাড়া থেকে নিয়ে মুরগিটুলা সবজায়গার দেয়ালে এটি দেখা যায়।  বিস্ময়ের ব্যাপার হলো মন্ত্রীপাড়ার পথ ধরে আপনি হেটে হেটে মুরগিটুলা পর্যন্ত যান। যাওয়ার পথে প্রতিটি বাড়িতে একবার করে বলুন, ভাই! আমি একটু ওয়াশ রুমে যেতে চাই। আমি বুকে হাত দিয়ে বলছি, পাথরের এই শহরের পাথুরে কোন মানুষই আপনাকে এই সুযোগটি দিবে না।  

    তাহলে আমি পেশাব করব কোথায়? পাবলিক টয়লেটে! কোথায় পাব সেটি? দু- কোটি মানুষের এই শহরে পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা কত জানেন? গত দুবছর আগে ছিল মাত্র ৪৭ টি। এখন হয়ত একশটি। এর বেশি না। নাই কেন?  সে জবাব রাষ্ট্র দিবে। তবে আমি যেটি বলতে চাই সেটি হলো- মানুষ কতটা অমানবিক হলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ব্যাকুল একজন মানুষকে বাসার গেইট বা অফিসের দরজা থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে!  

    রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের প্রয়োজন পুরণ করে দেয় আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের কষ্ট বা অসুবিধা দূর করে দেয় এর বিনিময় আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার কষ্ট ও বিপদ দূর করে দিবেন।’ (বুখারী-মুসলিম)  

    আগন্তুক ও পথবাসী মানুষের জন্য আপনার বাড়ির গ্রাউন্ড ফ্লোরের টয়লেটটি খোলা রাখলে কতই না সুন্দর হতো! কত মানুষের প্রাণভরা দোয়া আপনি পেয়ে যেতেন অনায়াসে।  তাছাড়া ঢাকা শহরে এই সময় মসজিদের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। প্রতিটি মসজিদে রয়েছে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা।  সাধারণ মানুষের কল্যাণে মসজিদের টয়লেটগুলোকে সব সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষের কত বড় উপকার হতো!  

    ভিক্ষুক প্রবেশ নিষেধ: 

    ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করে। ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তিকে যেমন নিকৃষ্ট হালাল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তেমনি নির্দেশনা দিয়েছে, ‘তোমাদের ধনীদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের ন্যায্য অধিকার।’  আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘কোন গরিব-দুঃখিজন কিছু চাইলে তাকে ধমক দিয়ে ফিরিয়ে দিও না।’ (সূরা দোহা)  

    শহুরে জীবনে প্রকৃত অভাবী ও বঞ্চিতদের বদলে তথাকথিত ভিক্ষুকদের যন্ত্রণায় অসহ্য আমরা। হয়তো বাধ্য হয়েই ভিক্ষুক প্রবেশ নিষেধের এ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেই।  কিন্তু একবার হলেও আমরা কী ভেবে দেখেছি যে- এর মাধ্যমে আমরা কত কত প্রকৃত অভাবি ও দুস্থদেরকে বঞ্চিত করছি তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে।  একজন অভাবী যখন বহু পথ মাড়িয়ে আপনার আলিশান ভবনের ফটকে এসে দেখে ‘ভিক্ষুক প্রবেশ নিষেধ’। তখন সে হয় তো কিছু না বলেই নীরবে চলে যায়।  

    কিন্তু তার মনিব আল্লাহ তায়ালা এটা সহ্য করবেন কি না- সেটা বলা মুশকিল। আপনি তাকে সহায়তা করুন আর নাই করুন। এভাবে সাইনবোর্ড টানিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অধিকার আপনাকে ইসলাম দেয়নি।  প্রকৃত ভিক্ষুকদের সাময়িক সহযোগিতাই নয় বরং তাদের স্থায়ী পুর্নবাসনের দায়িত্বও আপনার আর আমার।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !