বাসর রাতেই বিড়াল মারতে হয়, পরে নয়!
একদা বাগদাদের বাদশাহ’র ছিল দুইজন কন্যা। এই দুই রাজকন্যা ছাড়া তার ছিল না কোন রাজপুত্র। রাজকন্যা দুজন ছিল বাদশাহ’র অনেক আদরের। সবসময় দুই রাজকন্যার জন্য দশ-পনেরো জন দাসী প্রস্তুত থাকতো- কখন কোন রাজকন্যার কি দরকার হবে আর তারা হুকুম পালন করবে! দুই রাজকন্যারই একটা করে বিড়াল ছিল। বিড়াল দুটো ছিল তাদের সবসময়ের সাথী। তারা খেতে, বসলে, এমনকি ঘুমাতে গেলেও ঐ বিড়াল দুটো সাথে সাথে থাকত!
তো দেখতে দেখতে দুই রাজকন্যাই একসময় বড় হয়ে গেলো, তারা বিবাহোপযোগি হয়ে গেলো। তারপর বাদশাহ’র চিন্তা বাড়তে লাগল, কারন এই দুই রাজকন্যার জামাইদের উপরেই তার এই বিশাল রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে যেতে হবে। সুতরাং, এমন যোগ্য দুজন ছেলে খুঁজে বের করতে হবে, যারা এই গুরু দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারবে। সারা রাজ্যে অনেক খোজাখুজি করে এমন দুইভাই পাওয়া গেলো যাদের কাছে রাজকন্যাদের বিয়ে দেয়া যায় বলে বাদশাহ’র মনে হল!
তারপর অনেক ধুমধাম করে বিয়ে হল দুই রাজকন্যার একসাথে। অতঃপর বাদশাহ দুই মেয়ে জামাইকে সমান ভাবে রাজ্যের দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন। দুই ভাই রাজ্য চালনা নিয়ে অনেক ব্যাস্ত হয়ে পরলো। দুইজনের অনেক দিন দেখা সাক্ষাত নেই।
হঠাত করেই রাজ্যের একটা বড় অনুষ্ঠানে দুই ভাই এর দেখা হয়ে গেলো। তারপর দুইজনই আবেগে আপ্লুত হয়ে পরলো, এতদিন পরে ভাইএর সাথে দেখা এই জন্যে! তারপর অনেক কথার মধ্যে ছোট ভাই জিজ্ঞাসা করলো তাদের ‘বৌ’ মানে রাজকন্যাদের কথা! উত্তরে বড় ভাই বলল যে, বড় রাজকন্যা তাকে অনেক সমীহ করে চলে। তার কোন কাজই করা লাগে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব শুনে ছোটভাই বলল, ছোট রাজকন্যা তার কোন যত্নই করে না। সবসময় রাগারাগি করে, এমনকি মাঝে মাঝে গায়েও হাত তুলে! তখন বড় ভাইকে সে জিজ্ঞাসা করল, “কিভাবে বড় রাজকন্যাকে বশ করলে?” বড় ভাই বলল, “রাজকন্যার বিড়ালের কথা…” ছোট ভাই বলল, “হ্যাঁ ওই বিড়ালকে তো আমার চাইতেও বেশি যত্নে রাখে।”
বড় ভাই বলল, “প্রথম দিন বাসর রাতে ঘরে ঢুকেই আমি একটা তরবারি দিয়ে ওই বিড়ালের ওপরে দিলাম এক কোপ। ব্যাস একবারে দুইভাগ। এই ঘটনায় বড় রাজকন্যা ভাবলো আমি মনে হয় অনেক বড় কোন বীর, এরপর থেকেই সে আমাকে অনেক সমীহ করে চলে।”
তো এই কথা শুনে ছোটভাই মনে মনে ভাবলো, ঠিক আছে, আজকে বাড়ী ফিরেই বিড়ালের জীবন নাশ করা লাগবে! আবার অনেকদিন পরে দুই ভাই এর দেখা। এবার ছোট ভাইএর শরীরে অনেক কাটা দাগ।
বড়ভাই জিজ্ঞাসা করলো কি খবর কোন যুদ্ধে আহত হয়েছিলে নাকি? ছোটভাই বলল, না ভাই তোমার ঘটনা শুনে আমি ওইদিন বাসায় গিয়ে তরবারি নিয়ে এক কোপে বিড়ালটাকে দুইভাগ করে দিলাম। কিন্তু আমার বেলায় ঘটনা উল্টো হল! আমাকে এর শাস্তি স্বরূপ একমাস কারাবন্দি আর অত্যাচার ভোগ করা লাগলো… তখন বড়ভাই বলল, “বুঝলিরে পাগলা… বিড়াল বাসর রাতেই মারতে হয়, পরে মারলে কোন লাভ নাই!”
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.