বাজরিগারের কেইজ ব্রিডিং ও কলোনী ব্রিডিং-কিছু পার্থক্য, সুবিধা ও অসুবিধা
বাজরিগার ব্রিডিং এর আগে অনেক গুলো বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল ব্রিডিং এর জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন। সাধারনত দুই ধরনের ব্রিডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কেইজ ব্রিডিং ও কলোনী ব্রিডিং। আপনাকে কেইজ বা কলোনী এই দুটির মাঝে একটি বেছে নিতে হবে। অনেকে পরীক্ষামূলকভাবে দুই পদ্ধতিই অনুসরণ করেন।
কেইজ ও কলোনী ব্রিডিং এর মাঝে তফাৎ কি কি? কেন কেউ কেইজ ব্রিডিং আর কেউ কলোনী ব্রিডিং বেছে নেন? কোন পদ্ধতির কি সুবিধা বা অসুবিধা? আসুন দেখা যাকঃ
(১) কেইজ ব্রিডিং কি?
কেইজ হল একক জোড়ার জন্য আবাস। এক জোড়া পাখির জন্য একটি আলাদা খাঁচা, হাড়ি বা নেস্ট বক্স, আলাদা খাবার ও পানির পাত্র থাকে। অধিকাংশ ব্রিডার এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন কারন এতে করে কি ধরনের বাচ্চা হবে বা প্রত্যাশিত সেটা নিয়ন্ত্রন করা যায়। এই পদ্ধতি পাখির ও ডিম-বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং জোড়া ভেঙ্গে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
(২) কলোনী ব্রিডিং কি?
কলোনী ব্রিডিং-এ একটি বড় খাঁচায় একাধিক জোড়া থাকে এবং একাধিক হাড়ির ব্যবস্থা রাখা হয়। সাধারনত যেসব ব্রিডার কেইজ ব্রিডিং এর জন্য আলাদা আলাদা খাঁচা কিনতে চান না বা জায়গার অভাব আছে তারা অনেক সময় এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
অনেকেই মনে করেন যে, বাজরিগার প্রকৃতিতে একসাথে বসবাস করে, তাহলে পোষ্য অবস্থায় ব্রিডিং এর সময় একসাথে রাখা যাবে না কেন? এই ধারনা থেকেও অনেকে কলোনী ব্রিডিং পছন্দ করেন। এই ক্ষেত্রে কিছু যুক্তিতর্কের অবকাশ আছে যা একে একে আলোচনা করা হলঃ
(i) বাসস্থানের সীমাবদ্ধতাঃ প্রকৃতিতে বাজরিগারের নিজস্ব বাসা নির্বাচনের অসীম সুযোগ রয়েছে। যদি কোন একটি বাসা অন্য একটি জোড়া দখল করে ফেলে তাহলে তারা অনেক দূরদূরান্তে পছন্দের বাসা খুঁজতে যেতে পারে। কিন্তু কলোনীতে এই সুযোগ অনেক সীমিত। যে কারনে প্রায়শই মারামারি লেগে থাকে।
(ii) মারামারি থেকে পলায়নের সীমাবদ্ধতাঃ প্রকৃতিতে দুটি পাখির মাঝে মারামারি লেগে গেলে যে কোন একটি পাখির পালিয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট সুযোগ ও জায়গা রয়েছে। কিন্তু কলোনীতে যখন দুটি পাখি একে অন্যকে সহ্য করতে না পারে তারপরেও তাদের সবসময় পাশাপাশি থাকতে হয়, তার উপর ব্রিডিং এর সময় হরমোনের প্রভাবে স্ত্রী পাখি অনেক বেশি উত্তেজতি থাকে ফলে মারামারির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। পালিয়ে যেতে না পারার কারনে দুর্বল পাখিটি বারংবার আক্রমনের শিকার হয় এবং আহত হয়ে মারাও যেতে পারে।
(iii) জোড়া ভেঙ্গে যাওয়া ও বিজোড় সংখ্যক পুরুষ বা স্ত্রী পাখির অবস্থানঃ কলোনী ব্রিডিং এর আরেকটি সমস্যা হল জোড়া জেঙ্গে যাওয়া। যদি বিজোড় সংখ্যক পাখি থাকে তাহলে সে কোন একটি জোড়াকে বিরক্ত করতে থাকবে। আপনি যদি সমান সংখ্যক পুরুষ ও স্ত্রী পাখি রাখেন তার পরেও নিশ্চয়তা দেয়া যায় না যে তারা জোড়ায় জোড়ায় মিলে যাবে কারন তাদের নিজস্ব পছন্দ ও ভালোলাগা আছে।
(iv) বর্তমান বাসা ফেলে চলে যাওয়াঃ অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রী পাখিটি যখন ডিমে তা দেয়া বা বাচ্চাকে বড় করে তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে তখন পুরুষ পাখিটি তার বর্তমান সঙ্গিনীকে ছেড়ে নতুন সঙ্গিনী বেছে নিতে চায়। যার কারনে স্ত্রী পাখিটির পক্ষে এতগুলো বাচ্চাকে খাওয়ানো ও পরিচর্যা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় যার পরিনতিতে বাচ্চারা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না। তাছাড়া যেসব পাখির সঙ্গী চলে যার তাদের অন্য পাখিরা বিরক্ত করা থেকে শুরু করে আক্রমন পর্যন্ত করে করতে পারে।
(v) বাসা দখলঃ কলোনী ব্রিডিং এ জোড়ার চেয়ে বেশি সংখ্যক হাড়ি দেয়া থাকলেও এবং সেগুলো আমাদের কাছে একই রকম মনে হলেও পাখিদের কাছে মোটেও একই রকম নয়। কোন একটি বাসা যদি অন্য কোন স্ত্রী পাখি দখল করে রাখে, এমনকি ডিম -বাচ্চা থাকলেও অন্য একটি স্ত্রী পাখি আমৃত্যু লড়াই করে যেতে পারে তার পছন্দের বাসার জন্য যদি সে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যে ওই বাসাটাই তার লাগবে কারন তার পছন্দের বাসা নির্বাচনের সুযোগ অনেক কম এবং এটা কোন রকম পূর্ব সংকেত ছাড়াই ঘটতে পারে যার পরিনতি মারাত্মক আহত হওয়া থেকে মৃত্যু।
তারপরেও এই দুই ধরনের ব্রিডিং পদ্ধতি চালু আছে। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে কলোনী ব্রিডিং এর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। যেমনঃ
(১) ৩-৪ মাস বয়স থেকে কলোনীতে পাখিদের রাখতে হবে যাতে তারা আগে থেকেই অভস্ত্য হয়ে যায়। সমান সংখ্যক পুরুষ ও নারী রাখতে হবে।
(২) কলোনীতে যত জোড়া পাখি থাকবে তার চেয়ে বেশি হাড়ি রাখতে হবে।
(৩) হাড়িগুলো একই সমান্তরালে স্থাপন করতে হবে।
(৪) আগ্রাসী কোন পাখি থাকলে তাকে সরিয়ে দিতে হবে।
(৫) সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখতে হবে যাতে করে মারামারি লেগে গেলে তা প্রতিহত করা যায়।
(৬) গাদাগাদি করে পাখি রাখা যাবে না। যথেষ্ট পরিমান জায়গা থাকতে হবে ইত্যাদি।
কিন্তু যারা কোন রকম ঝামেলায় যেতে চান না এবং নিয়ন্ত্রিত ব্রিডিং করাতে চান তাদের জন্য কেইজ ব্রিডিং-এর কোন বিকল্প নেই।
অারোও পড়ুন- স্ত্রী-পুরুষ বাজরীগার সনাক্ত করার উপায়
অারোও পড়ুন- বাজেরিগার পাখি পালন, পরিচর্যা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
Bangladeshi Taka Converter
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.