বাজরিগারের বাচ্চা জন্মানোর পর করনীয়
দীর্ঘ ১৮ দিন তা দেয়ার পর পৃথিবীতে আসে বাজরিগারের বাচ্চা । তাদের মৃদু কিচমিচ শব্দ আপনাকে জানিয়ে দেবে তাদের আগমনী বার্তা । তাদের চাই খাবার , নিরাপদ বাস্থান ও মা-বাবার উষ্ণতা। জন্মের পর থেকে প্রথম ৭ দিন বাচ্চার অবস্থা খুব ই নাজুক থাকে। তাই আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে তাদের যত্নআত্তির ব্যাপারে। নিচের টিপস গুলো মেনে চললে আপনার বাজরিগারের বাচ্চা ভালো থাকবেঃ
১/ বাচ্চা হলে পাখির খাঁচায় পর্যাপ্ত খাবার ও পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে সবসময় । এসময় বাজরিগার প্রচুর খাবার ও পানি খায় । তাই প্রতিদিন বেশি করে খাবার দিতে হবে বা সিড হপারে খাবার দিতে হবে। অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই ফোটানো পানি দেবেন।
২/ বাচ্চার হজম শক্তি মা বাবার তুলনায় অনেক কম হয় । তাই খাবারে সামান্য ভুলভাল হলেই বাচ্চা মারা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাজার থেকে সিডমিক্স কিনে এনে ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে অথবা পারতপক্ষে সিডমিক্স কুলায় ঝেড়ে ধুলিমুক্ত করতে হবে। বাচ্চার জীবাণুমুক্ত খাবার আলাদা পাত্রে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
৩/ বাচ্চা হলে সফটফুড যেমন ডিম সিদ্ধ , পাউরুটি ভেজা , ভুট্টা সিদ্ধ , গাজরকুচি , বরবটি , ধনেপাতা এবং কলমি/পালং শাক দিতে হবে। তবে আমি আগেও বলেছি , বাচ্চার হজম শক্তি বাবা মায়ের তুলনায় অনেক কম। সফটফুড বাচ্চা হজম করতে না পারলে পাতলা পায়খানা করবে। অনেক সময় খুব বেশি পাতলা পায়খানা করলে হাড়িতে কাদার মত হয়ে যায়। এতে হাড়ির অন্য ডিম না ও ফুটতে পারে বা অন্য বাচ্চা মারা যেতে পারে । তাই আমার মতে সব বাচ্চা ফোটার আগে সফটফুড না দেয়া ভালো। আর যদি দেন তাহলে সতর্ক থাকবেন। যখনই দেখবেন বাচ্চা পাতলা পায়খানা করছে তখনই সফট ফুড দেয়া বন্ধ করে দেবেন। সফটফুড গরমকালে ২ ঘণ্টা ও শীতকালে ৩ ঘণ্টার মধ্যে খাঁচা থেকে সরিয়ে ফেলবেন।
৪/ বাচ্চাদের জন্য ভিটামিন বিসি গোল্ড (BC GOLD) টনিক হিসেবে পরিচিত। এটা বাচ্চার বেড়ে ওঠা দ্রুততর করে। এটা সপ্তাহে ৩/৪ দিন দেয়া যেতে পারে।
৫/বাজরিগার কোন কারণে ভয় পেলে হাড়ির ভেতর হুড়মুড় করে হাড়ির ভেতর ঢুকে। এতে বাচ্চারা মা বাবার পায়ের চাপে মারা যেতে পারে। তাই আপনি যখন তাদের দেখতে যাবেন তখন আস্তে ধীরে যান। এভিয়ারি ইঁদুর , টিকটিকি , কাক ও চড়াই এসব মুক্ত রাখুন। কারন এগুলো দেখলে বাজি ভয় পায় ও খুব বেশি রিঅ্যাকট করে। তখন তাদের পায়ের চাপে বাচ্চা মারা যেতে পারে।
৬/বাচ্চা বারবার দেখবেন না। এতে উপরোক্ত সমস্যা হতে পারে। দিনে ১-২বার দেখা যায় । বাচ্চা দেখার জন্য হাড়ি না নামিয়ে আপনার মোবাইলের ক্যামেরা বা ভিডিও অপশন টি( ফ্লাশ ছাড়া) ব্যবহার করতে পারেন। এতে বারবার হাড়ি নামানোর ঝামেলা কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বাজি বুঝেনা যে আপনি তাকে কৃত্তিম চোখ দিয়ে দেখছেন ।
৭/ কোন বাচ্চা মারা গেলে ফেলে দিন। হাঁড়িতে পচে গেলে বা শুকিয়ে গেলে তা অন্য বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৮/ বাচ্চার হাড়ি কিছুদিন পর পর পায়খানায় ভরে যায়। মজার ব্যাপার হল অনেক বাজি সেই পায়খানা নিজেরাই পরিস্কার করে। আপনি সপ্তাহে অন্তত একবার হাড়ি পরিস্কার করুন। হাড়ি পরিস্কার করার একটা সহজ বুদ্ধি হল হাড়ি ভালো করে ধুয়ে ভেতরে পেপার দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা। এটা সব জীবাণু জীবন্ত পুরে মারা যায়।
৯/ বাচ্চার বয়স ২৫ দিন হলে তাকে নিচে একটা মাটির পাত্রে নামিয়ে দিন এবং হাড়ি সরিয়ে ফেলুন । পাত্রে কিছু কাউন দিন যাতে তারা খাবার খেতে শেখা আয়ত্ত করতে পারে ।
১০/বাচ্চা উড়তে শেখার সাথে সাথে খাঁচা থেকে আলাদা করে দিন । নাহলে তারা মা-বাবার আক্রোশের শিকার হতে পারে।
বাজরিগার এর বাচ্চার জন্য নরম খাবারঃ
কোন কারণে বাবা মা বাচ্চাকে না খাওয়ালে কি করবেন ?
বাচ্চা ছোটো অবস্থায় নরম খাবার খেতে পারে আর নরম খাবার ই বারজিগার এর বাচ্চার জন্য ভালো । দেশীডিম সেদ্ধ , কাউনের চাল সেদ্ধ , ব্রোকলি, শাকসব্জি (বরবটি , কলমি শাক), কুমড়া, মটরশুটি, ছোলার ডাল, কাচা অথবা হালকা সেদ্ধ , ফল : আপেল, চাপা কলা , পেপে,স্ট্রবেরি, কাটলবোন এর গুড়া , সামান্য ঘৃতকুমারী, সামান্য মধু এইসব একসাথে বেলন্ডারে মিক্স করে পেস্ট এর মতন বানিয়ে চামচ দিয়ে বাচ্চা কে খাওয়ানো যায়।
ঘরে তৈরি নরম খাবারঃ
- দেশীডিম সেদ্ধ- অর্ধেক
- ছোলা সেদ্ধ- ২ চা চামচ
- কাউনের চাল সেদ্ধ- ২ চা চামচ
- সব্জি(বরবটি, কলমি শাক, ব্রকলি, কুমড়া) কাচা অথবা হালকা সেদ্ধ- ১ কাপ
- ফল(আপেল, চাপা কলা, পেপে, স্ট্রবেরী ইত্যাদি) – ১/২ কাপ
- ক্যাটলবোন এর গুড়া- ১ চা চামচ
- ঘৃতকুমারি- ১ চা চামচ
- খাঁটি মধু- ২ চা চামচ
- সজনে পাতা- ১/২ কাপ
উপরের উপাদানগুলো সব একসাথে ব্লেন্ড করে পেস্ট এর মত করবেন। গ্রীষ্মকালে খাঁচার মধ্যে এই খাবার ১-২ ঘণ্টা আর শীতকালে ২-৩ ঘণ্টা রাখা যাবে। রেফ্রিজারেটরে রেখে ব্যবহার করতে চাইলে গ্রীষ্মকালে পর পর দুইদিন আর শীতকালে পর পর তিনদিন রাখা যাবে।
কোন কারণে বাবা মা বাচ্চাকে না খাওয়ালে কি করবেন ?
উত্তরঃ ফসটার বা পালক বাবা মা দ্বারা বাচ্চাকে লালন পালন করা।
ফসটার মানে হলঃ পালক পিতা মাতা দ্বারা সন্তান লালন পালন। অনেক সময় বেশি ব্রিডিং এর কারণে অথবা মেটিং এর কারণে বাচ্চার প্যারেন্টস বেবিদেরকে খাওয়ায় না। তখন বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য আপনাকে অন্য প্যারেন্টস এর সাহায্য নিতে হয়। একে ফসটার বলা হয়।
যেসব বাচ্চা এর গায়ে পালক উঠছে ওগুলোকে প্যারেন্টস সহজেই চিনতে পারে তাই তাদেরকে রাতের বেলায় ফসটার করতে হয়। পরদিন সকালে বাজরিগুলো গুলো ভুলে যায় কোনটা কার বাচ্চা, তাই নিজের বেবি মনে করে খাওয়ায় আর যাদের পালক উঠে নাই তাদের যে কোন সময়েই ফসটার করা যায়।
বাচ্চা ফসটার এর ক্ষেত্রে যে সব বাচ্চার গায়ে পালক উঠেনি বা পালক রং বুঝা যাচ্ছে না ওগুলো দিনের যে কোন সময় ফসটারের হাড়িতে দিতে পারেন কাজ টা করার জন্য আপনি দুইটা হাঁড়িকেই ( মূল হাড়ি এবং ফসটার হাড়ি) বের করে আনুন ( হাড়িতে প্যারেন্টস থাকবে না) ।
ফসটার হাঁড়িতে গায়ে পালক না উঠা বাচ্চা থাকতে হবে। এবার মূল হাড়ি থেকে বাচ্চা গুলোকে ফসটার গুলোতে স্থানান্তর করুন। পুরো কাজটাতে ৩ থেকে ৪ মিনিট সময় নিবেন। এবার ফসটার হাঁড়িটা ফসটার প্যারেন্টস এর হাড়িতে ঢুকিয়ে দিন।
গায়ে পালক উঠা বাচ্চার ক্ষেত্রে কাজটা করার জন্য রাতের বেলা বেঁছে নিন। সময় টা রাত ৯ টা ১০ টা হলে ভাল হয়। ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার থাকবে কোন বাতি জলবে না। শুধুমাত্র আগের নিয়মে বাচ্চা গুলোকে মূল হাড়ি থেকে ফসটার হাড়িতে স্থানান্তর করুন, যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে। তারপর রাতটা শেষ হতে দিন সকালে ফসটার প্যারেন্টসদের বাচ্চাটার সাথে ওই বাচ্চাটাকেও খাওয়াবে।
অারোও পড়ুন- স্ত্রী-পুরুষ বাজরীগার সনাক্ত করার উপায়
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.