রাজশাহী চিড়িয়াখানায় বাচ্চা দিয়েছে ময়ূরী
রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় প্রথমবারের মতো ডিম দিয়েছিল ঘড়িয়াল ও ময়ূরী। ঘড়িয়াল ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা ফোটাতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সফল হয়েছে ময়ূরী। ময়ূরীর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার ঘটনা রাজশাহী চিড়িয়াখানায় এবারই প্রথম। ঘড়িয়ালের ডিম থেকে বাচ্চা হলে এটিও প্রথমবারের মতোই হতো। তবে দুর্ভাগ্যবশত ঘড়িয়ালের ডিম নষ্ট হয়ে পুকুরের পানিতে ভেসে উঠেছে। সম্প্রতি এমন ঘটনার পর চিড়িয়াখানার কর্মীদের যখন মন খুব খারাপ, তখনই ময়ূরীর ডিম ফুটে বাচ্চা উঠেছে। বাচ্চাটির বয়স এখন ১২ দিন।
রাজশাহী চিড়িয়াখানায় আগে দুটি নারী ঘড়িয়াল ছিল। আর ঢাকায় ছিল দুটি পুরুষ ঘড়িয়াল। কিন্তু পুরুষের সঙ্গে নারী কিংবা নারীর সঙ্গে পুরুষ না থাকায় মহাবিপন্ন প্রাণীটির প্রজনন হচ্ছিল না। ঘড়িয়ালদের এই বিরহ কাটিয়ে প্রজননের সুযোগ করে দিতে ২০১৭ সালের আগস্টে চিড়িয়াখানা ও বন বিভাগের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) আন্তচিড়িয়াখানা ঘড়িয়াল বিনিময় করে। সরকারের ‘ঘড়িয়াল কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যানের’ অংশ হিসেবে দুই চিড়িয়াখানার মধ্যে এই ঘড়িয়াল বিনিময় সম্পন্ন হয়। এর মাধ্যমে রাজশাহী থেকে একটি নারী ঘড়িয়ালকে ঢাকায় পাঠানো হয় এবং ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়ালকে রাজশাহী আনা হয়। এরপর রাজশাহীর নারী ঘড়িয়ালটির নাম দেওয়া হয় ‘পদ্মা’। আর পুরুষটির নাম হয় ‘গড়াই’। প্রায় ৩০ বছর বয়সী পদ্মা ও গড়াইয়ের সংসার শুরু হয়। প্রায় ২০ মাস পর সম্প্রতি পুকুরে একটি ডিম পান চিড়িয়াখানার কর্মীরা।
কিন্তু ডিমটি ছিল নষ্ট। তাই ভেসে উঠেছিল পানিতে। চিড়িয়াখানার পশু পরিচর্যাকারী বাবর আলী জানান, লক্ষণ দেখেই তারা বুঝেছিলেন পদ্মা ডিম দিয়েছে। কিন্তু ডিম দেওয়ার জন্য তারা পুকুরের মাঝের অংশে বালু দিলেও সেখানে পদ্মা ডিম পাড়েনি। ডিম দিয়েছিল পানির নিচেই। সম্প্রতি ডিমটি পানিতে ভেসে ওঠে। প্রথমবার ডিম দেওয়ার কারণে ডিমটি নষ্ট হয়ে গেছে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে পুকুরে এখনো কোনো ডিম আছে কি না তা তারা নিশ্চিত নন।বাবর বলেন, নষ্ট ডিম পেয়ে তাদের ভীষণ মন খারাপ। ঠিক এমন মুহূর্তেই তারা ময়ূরের খাঁচায় একটি বাচ্চা দেখতে পান। এতে তাদের মন খারাপ কিছুটা হলেও কেটে যায়। বাবর জানান, রাজশাহী চিড়িয়াখানায় অনেক আগে বেশ কিছু ময়ূর ছিল। সেগুলো একে একে মারা যায়। তাই তিন বছর আগে ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ও একটি নারী ময়ূর আনা হয়। এরপর এবারই প্রথম নারী ময়ূরটি দুটি ডিম দেয়। এর মধ্যে একটিতে বাচ্চা উঠেছে। অন্যটি নষ্ট হয়ে গেছে। চিড়িয়াখানায় এবারই প্রথম কোনো ময়ূরের বাচ্চা উঠল।
চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের চিড়িয়াখানায় এখন মাত্র ১১টি ঘড়িয়াল আছে। আর বিভিন্ন নদীতে ৫৮টি ঘড়িয়াল দেখতে পাওয়া গেছে। তাই চিড়িয়াখানায় ডিম থেকে ঘড়িয়ালের বাচ্চা ওঠা নিয়ে তারা বেশ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাচ্চা ওঠেনি। তবে ময়ূরের বাচ্চা ওঠায় তারা বেশ খুশি। ভবিষ্যতে ঘড়িয়ালেও বাচ্চা উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.