হালকা ব্যায়াম!
শীতকাল শেষ হয়ে এখন শুরু হয়েছে বসন্তকাল, ঋতু পরিবর্তনের সময়গুলোয় আমাদের শরীর রোগ-জীবাণুর প্রতি খুব সংবেদনশীল থাকে। এ সময়ে আমাদের শরীর বেশি রোগাক্রান্ত হয়। শুধু রোগ নয়, ঋতু পরিবর্তনের এ সময় শরীরে অবসাদ বা অলসতা দেখা দেয়।
এছাড়া জীবনকে সফল ও উপভোগ্য করতে এবং সর্বোপরি কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পেতে ফিটনেস ধরে রাখতে হবে। শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মনও থাকে প্রফুল্ল এবং কাজে দ্বিগুণ মনোযোগী হতে সকালের ব্যায়ামের বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম থেকে উঠে হালকা ব্যায়াম করলে শরীরের ‘ম্যাজম্যাজ’ ভাব কেটে যায় শরীরে রক্ত চলাচল ঠিক রাখতেও সকালের ব্যায়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সকালবেলার শরীরচর্চায় সারাদিনের জন্য শরীর ফিট থাকবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, কর্মক্ষম আর ঝরঝরে মন নিয়ে কাজ করতে পারবেন। সারাদিনে সকালে ব্যায়াম করাই ভালো কারণ এই শহরে সতেজ বাতাসে শ্বাস নিতে চাইলে ভোরবেলাই উত্তম সময় ।প্রতিদিন অল্প কিছু শারীরিক ব্যায়াম এবং কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই শরীর থাকবে রোগমুক্ত এবং কর্মচঞ্চল। হালকা ব্যায়ামের মধ্যে হাঁটা বা জগিং হল সর্বোৎকৃষ্ট আজ এ বিষয়ে কথা হয় এভারগ্রীন ইয়োগার প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তনুর সঙ্গে
পানি পান : ঘুম থেকে উঠেই পর্যাপ্ত পানি পান করুন। সারা রাত ঘুমের জন্য আমাদের শরীর প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা কখনও বা তার বেশি সময় পানি পায় না। সুতরাং এ সময়টাতে পানির চাহিদা খুব বেশি থাকে। তাই আরেকটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার সেটা হল সকালে দাঁত ব্রাশ করার আগে কমপক্ষে ২ গ্লাস (৫০০ মি.লি) পানি পান করুন। সারা রাত মুখের মধ্যে অনেক উপকারী এনজাইম ঘনীভূত হয়। তাই দাঁত ব্রাশ করার আগে পানি পান করা আমাদের শরীরের জন্য প্রকৃতপক্ষে অনেক উপকারী।
ব্যায়াম শুরু করার আগে পানি পানই যথেষ্ট। যদি শরীর দুর্বল লাগে তবে হালকা কিছু খেয়ে নিতে পারেন যেমন- বিস্কুট/ব্রেড/হাফবয়েল ডিম ইত্যাদি।যে ধরনের ব্যায়ামই করুন, শারীরিক সুস্থতার জন্য কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম অবশ্যই করা উচিত। আপনার শরীরের গঠন ও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়ামের পদ্ধতি নিজেই বাছাই করুন বা কোনো অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে পারেন।
হাঁটাহাঁটি (Walking) : এটার চেয়ে সহজ ব্যায়াম আর নেই। তবে এটা অফিসে যাওয়া বা আসার পথে হাঁটাহাঁটি হলে তেমন কোনো কাজেই লাগবে না। ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে আপনাকে অবশ্যই মনস্থির করে আলাদাভাবে সময় দিতে হবে। হাঁটাহাঁটির জন্য পার্কে যেতে পারেন।
যদি পার্কে যেতে না পারেন তাহলে নিজের এলাকার রাস্তা, ব্যবহার করতে পারেন। সকালের বায়ু খুব নির্মল ও প্রচুর অক্সিজেন সমৃদ্ধ থাকে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। যদি ওজন কমানোর লক্ষ্যে হাঁটতে চান, তাহলে আপনাকে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটতেই হবে। ওজন স্বাভাবিক হলে কমপক্ষে ১৫ মিনিট হাঁটুন, হাঁটার গতি এমন হবে যাতে শরীর আস্তে আস্তে ঘামিয়ে ওঠে।
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার উপকারিতা
-হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
- নিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ বজায় থাকে।
-অতিরিক্ত ওজন কমায়।
- সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে।
-হাড় মজবুত করে এবং ভারসাম্যের উন্নতি সাধন করে।
হালকা দৌড়ানো (Jogging) : হাঁটাহাঁটির মতো দৌড়ানোর জন্যও পার্ক সবচেয়ে উত্তম জায়গা। পার্কে সম্ভব না হলে রাস্তা ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত ওজন কমাতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিন ৩০ মিনিট দৌড়াতে হবে। দৌড়ের গতি কখনই নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাবে না। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। যাদের ওজন স্বাভাবিক, তারা কমপক্ষে ১০ মিনিট দৌড়াবেন।
যে বিষয়গুলো আমাদের খেয়াল রাখা দরকার
-গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
-দৌড়ের Step-এর সঙ্গে breathing করুন, যেমন ধরুন ৪ স্টেপে শ্বাস ভরুন এবং পরবর্তী ৪ স্টেপে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে করলে কষ্ট কম হয়।
-দৌড়ানোর সময় শরীরের ভর যেন গোড়ালির ওপর না পড়ে, পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে দৌড়ানোর অভ্যাস করবেন।
দৌড়ালে শরীরের অতিরিক্ত ওজন খুব তাড়াতাড়ি হ্রাস পায়। Blood Circulation অনেক উন্নতি লাভ করে। ফলে শরীর-মন কর্মচঞ্চল থাকে, কাজে-কর্মেও গতি বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে রোগ-জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে না। পায়ের মাংসপেশি ও হাড় অনেক মজবুত হয়। কোষ বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরির গতি বাড়ে। ফলে ত্বক সুন্দর হয়।
দড়ি লাফ (Skipping) : অল্প জায়গার মধ্যে দড়ি লাফ খুব চমৎকার একটা ব্যায়াম। কমপক্ষে ৫ মিনিট অবশ্যই করবেন। নিজের ওজন ও দক্ষতা অনুযায়ী গতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। বারবার ঘড়ি দেখতে সমস্যা হলে বিভিন্ন সংখ্যায় গুণে করতে পারেন যেমন- ১০০, ২০০, ৩০০ ইত্যাদি। প্রথমে ঘড়ি দেখে মিলিয়ে নেবেন যে ১ মিনিটে কতবার করতে পারেন। সে হিসাবে ৫ মিনিটে কতবার করতে পারেন সেটা হিসাব করে নেবেন। এ ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখবেন লাফ দিয়ে মাটিতে নামার সময় ভর যেন গোড়ালিতে না পড়ে পায়ের পাতার ওপর পড়ে। পায়ের গোড়ালিতে বারবার আঘাত পড়লে হাড়ের ও মেরুদণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
কিছু সতর্কতা :
-রাস্তায় হাঁটতে মাস্ক ব্যবহার করবেন। অন্যথায় এলার্জি বা অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে।
-হাঁটার সময় খালি পায়ে হাঁটা বিপজ্জনক। এ ক্ষেত্রে স্পোর্টস সু পরতে পারেন।
-শরীরচর্চার পর তাড়াতাড়ি পোশাক বদলাতে হবে।
-ঘাম শুকানোর আগে গোসল করবেন না। শরীর ঠাণ্ডা হলে গোসল করুন।
হাঁটার ব্যায়ামের পাশাপাশি স্ট্রেচিং, পেটের ব্যায়াম ইত্যাদি করতে হবে। হাঁটার উপকারিতা পেতে স্ট্রেচিং, পেটের ব্যায়াম ইত্যাদিও প্রয়োজন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.