ধরন বদলেছে বর্ষার!
এবার অদ্ভুত এক বর্ষা মৌসুম দেখছেন দেশবাসী। আকাশে কোনো মেঘ নেই, রৌদ্রোজ্জ্বল দিন, অথচ হঠাৎ করেই ঝুম বৃষ্টি। আকস্মিক এ বৃষ্টিতে পথচলা মানুষ ভিজে একাকার। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের ধরন ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের সময়ও বদলে যাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হচ্ছে, আবার ভাদ্র মাসে বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে বেশি বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। চলতি বছর স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. শাহ আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বছর গড়ে ৩৫ শতাংশের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। মৌসুমী লঘুচাপ বেশি হওয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়েছে। বৃষ্টিপাতের ধরন প্রতি বছরই বদলাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, গত কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলতি বছর বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হচ্ছে। তবে বৃষ্টি সময়মত হওয়া জরুরি। তা না হলে কৃষিব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে রেকর্ডকৃত বৃষ্টিপাত গত ১৪ বছরের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ২০০০-২০১৪ পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে, অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মোট বৃষ্টিপাত ৬৫ হাজার মিলিমিটার অতিক্রম করতে পারেনি। কিন্তু এ বছর জুন থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৬৭ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুনের প্রথম সপ্তাহে বর্ষা মৌসুমের শুরু হলেও মৌসুম শেষ হতে এখনো কিছুদিন বাকি আছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, এ সময় সারা দেশে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। আর এই বৃষ্টি কখনো অঝোর ধারায়, কখনো মাঝামাঝি, আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আকারের হতে পারে। সূত্র মতে, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর রংপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আবার অসময়ে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধ্বসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বিদেশি কৃত্রিম উপগ্রহের তথ্য অনুযায়ী মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)-এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বৃষ্টিপাতের ধরন বদলেছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দেশের শতাধিক স্থানে পানির স্তরের পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পরিমাপ করেছে। এ পরিমাপ অনুযায়ী, বৃষ্টিপাতের ধরন আর আগের মতো নেই। যখন যতটা হওয়ার কথা তখন তা হচ্ছে না। অল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে, আর বাকি সময় থেকেছে বৃষ্টিহীন। পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকের সাবেক উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে- বাংলাদেশ তার প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। ফলে বর্ষার আগে যেমন মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত হবেই, এমন নিশ্চয়তা নেই। এখন অল্প সময়ের মধ্যে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে। আবহাওয়া অধিদফতর ঘন ঘন ৩ নম্বর বিপদ সংকেত দিচ্ছে। বড় বড় ঘূর্ণিঝড় আমাদের উপকূল ও তার আশেপাশে ২-৩ বছর ধরে আঘাত না হানলেও পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে আঘাত হেনেছে। এছাড়া বেড়েছে শিলাবৃষ্টি ও ঘনকুয়াশা। বৃদ্ধি পাচ্ছে পোকামাকড়ের উৎপাত। আমাদের কৃষকরা ঋতুকাল দেখেই যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন প্রকারের ফসল উৎপাদন করেছেন। কিন্তু এখন ঋতুর এ পরিবর্তনে ফসল উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.