আবরার হত্যা নিয়ে যা বলছেন ডিএমপির মনিরুল
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ড অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম।বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীতে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে একটিমাত্র কারণে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনই বলা যাবে না। ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে জানতে আমাদের আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস বা শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এ অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি অনেক কারণের মধ্যে একটি হতে পারে। তবে এটিই একমাত্র কারণ কিনা- তা এখনই বলা যাবে না। কারণ আরও থাকতে পারে।গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরারকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ । এদের মধ্যে রয়েছে এজাহারভুক্ত ১২ জন ও এজাহার বহির্ভূত ৪ জন।গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১২ জন হল- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন ও হোসেন মোহাম্মদ তোহা।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এজাহার বহির্ভূত ৪ জন হল- ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ও শামসুল আরেফিন রাফাত।বৃহস্পতিবার আবরার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এজাহার দায়ের করার পূর্বেই গত ৭ অক্টোবর ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রত্যেককেই ৫ দিনের রিমান্ড এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এছাড়াও ৮ অক্টোবর ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরও ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আজ (বৃহস্পতিবার) আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
ডিএমপি কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকুক না কেন প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। মামলাটি পেশাদারিত্ব ও সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে যদি কারও কাছে কোনো তথ্য থাকে, তাহলে আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।এ ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে তার বাবা চকবাজার থানায় সোমবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন। বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। পাশাপাশি গঠন করেছে একটি তদন্ত কমিটিও।এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বুয়েট শাখার সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.