সঠিক ভ্যাকসিন পেতে কোভিড-১৯ সম্পর্কে আরও জানতে হবে!
কোভিড-১৯ এর আসল চরিত্র এখনও কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। যারা গবেষণা করছেন তাদের যোগ্যতা সম্পর্কেই বা আমরা কতটুকু জেনেছি? বেশির ভাগ গবেষকগণ বলছেন, এই ভাইরাস একেক দেশে একেক রকম আচরণ করছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় এই ভাইরাস যে ক্ষমতা দেখাচ্ছে, পৃথিবীর অন্য এলাকায় তা দেখাচ্ছে না।
এ ধরণের মন্তব্য যারা করছে তাদের নিজেদের আচরণ কি এক রকমের? বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ বা গবেষকদের আচরণ কি একই ধরণের? যদি তুলনা করা হয় অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞ বা গবেষকদের সঙ্গে? কিন্তু কেন এমন হচ্ছে, তার সদুত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। কারণ বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠানই সঠিক শিক্ষা হচ্ছে না। সারাদিন আইফোন, সোশ্যাল মিডিয়া আর ট্রেডিং করে বেশির ভাগ বেতনধারি কর্মীরা গত বিশ বছর ধরে সময় পার করছেন। যার কারণে ডিজিটাল প্রযুক্তি ছাড়া অন্য বিষয়ের ওপর তেমন আশানুরূপ উন্নতি হয়নি বিশ্বে।
কোভিড-১৯ এর ওপর মার্কিন গবেষকরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা বলছেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় যে বিশেষ ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, তা ইউরোপ-আমেরিকার মতো ততোটা আগ্রাসী নয়।’ তারা এও বলেছেন, ভারত বা বাংলাদেশের যে জনঘনত্ব, তাতে ভাইরাস দুর্বল ভেবে বসে না থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাই একমাত্র পথ।
এর ব্যাখ্যায় তারা বলেছেন, এ ভাইরাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতি দ্রুত নিজেকে মিউটেট বা পরিবর্তিত করে আগামী দিনে আগ্রাসী রূপ নিতে পারে। চিকিৎসক এবং গবেষক মহলের একাংশও বলছেন, অতি দ্রুত মিউটেট করার ক্ষমতা রয়েছে করোনা ভাইরাসের। তাই যে কোনো সময় এটা আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে। আমার সন্দেহ হচ্ছে, এসব পণ্ডিতদের পৃথিবীর ওপর, পৃথিবীর মানুষের ওপর এবং পৃথিবীর মানুষের জীবনব্যবস্থার ওপর আদৌ কোন ধারণা আছে কি? থাকলে উপরের স্টেটমেন্ট দেবার আগে একটু গবেষণা করতেন তারা।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা আশপাশের মানুষের খাদ্যখাবার থেকে শুরু করে বসবাস তারপর হাইজিন, সর্দি, জ্বর, কাশি বা অন্যান্য পরিবেশ যেমন, তেমনটি কি দেখা যায় আমেরিকা বা ইউরোপে? ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস যে পরিবেশের মানুষের সঙ্গে গড়ে ওঠে, সেখানে যেমনটি প্রভাব বিস্তার করে, ঠিক তেমনটিই করবে অন্য পরিবেশে তার ওপর কি তেমন গবেষণা করা হয়েছে? হলে পণ্ডিতরা উপরের মন্তব্য করতেন বলে মনে হয় না।
বরং গবেষকরা একটু সময় দিয়ে রিসার্চ করলে জানতে এবং বুঝতে পারত এর সত্যতা। এবারের করোনা সুদূর চীন থেকে এসেছে। সেখানকার ভাইরাস যদি ইউরোপ আমেরিকায় ঢোকে স্বাভাবিকভাবে এই ভাইরাসের আচরণ ইউরোপ আমেরিকার মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর হবারই কথা।
এশিয়ার সুস্থ মানুষের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে তা ইউরোপ বা আমেরিকার মানুষের আছে বলে আমার মনে হয় না। যার কারণে ভাইরাসের আচরণ যেভাবে দেখা যাচ্ছে এক দেশে ঠিক সেই ভাবে অন্য দেশে দেখা নাও যেতে পারে।
আমি বরং অধ্যাপক প্রিয়দর্শী বসুর ব্যাখ্যাকে সাধুবাদ জানাই। তিনি বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহতা যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম বলে মনে হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দু’রকম। দু’টিই সত্যি। প্রথমত ‘হোস্ট ইমিউনিটি’ বা আক্রান্ত ব্যক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। ভারতের মতো যে সব অঞ্চল ম্যালেরিয়া প্রবণ, সেসব জায়গার মানুষের দেহে এমনিতেই একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। বিসিজি ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলেও এটা ঘটে থাকতে পারে।’
তিনি এও বলেছেন, ‘নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাস একটি পরিবার। তার নিজের নানা রূপ ও প্রকার রয়েছে। দেখা গেছে উহানে ভাইরাস তার রূপ ‘এ’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ‘বি’ এবং ‘সি’ টাইপ তৈরি হয়েছে।’ ভারত তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার (ডেথ ইনফেকশন রেশিও) এখনো ইউরোপের যেকোনো দেশের তুলনায়। যেহেতু অনেকটাই কম, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারত এখনো পর্যন্ত ‘বি’ ভাইরাস জোনে রয়েছে। এটাও ঠিক তবে মনে রাখতে হবে ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও এ, বি এবং সি রয়েছে সেটা ভুলে গেলে চলবে না।
কথায় বলে বাপেরও বাপ আছে। তাই বলব, বাংলার মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। যে জাতি প্রতিদিন বিষ খেয়ে হজম করতে পারে তাদের কাছে করোনা তেমন কোনো সমস্যাই না। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছে তাদের কী ধরণের উপসর্গ দেখা দিয়েছে? যারা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তাদের বেশির ভাগের কি অন্যান্য শারীরিক সমস্যা ছিল? ইতালি থেকে যারা দেশে ফেরত এসেছে তারা কি আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে?
যদি গবেষকদের কথা সঠিক হয় তবে ইতালি ফেরত করোনা আক্রান্তদের শক্তিশালী ভাইরাসের কবলে পড়ার কথা। সেক্ষেত্রে তেমন কোন সঠিক তথ্য আছে কি? হাজারও প্রশ্ন আমাদের থাকা স্বত্বেও সঠিক উত্তর এখনও নেই। সেক্ষেত্রে মনে করি ডেটা সংগ্রহ করার সঙ্গে বাংলাদেশ এবং ইউরোপের ভাইরাসের গুনাগুণের ওপর বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ এবং ইউরোপের আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার যাচাই বাছাই করার পর একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া শ্রেয় বলে মনে করি।
সর্বোপরি আন্দাজে ঢিল না ছুড়ে বরং রিসার্চে মনোযোগী হওয়া দরকার। কারণ শুরু থেকে করোনাভাইরাসকে ফুসফুসে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী রোগ হিসেবে ধারণা করা হলেও ভাইরাসটি শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো করে দিয়েছে কিছু কিছু রোগীকে। করোনা আক্রান্তদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি ও জমাট বাঁধার মতো কয়েকটি বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা হয়েছে। এমনকি রোগীদের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকভাবে জমাট বাঁধা রক্ত দেখা গেছে।
যদি কোভিড-১৯ এর সঠিক তথ্য না জানা যায় তাহলে কিভাবে একটি নির্ভর যোগ্য ভ্যাকসিন পাব আমরা এত অল্প সময়ের মধ্যে? করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই সময়ে এসব সমস্যায়ও অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। অতিরিক্ত চাপ ও উদ্বেগ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, আত্মবিশ্বাসে ভাঙন ধরায়।
কাজেই যত সত্য জানবেন, তত সতর্কতা বাড়বে, আর মোকাবিলাও করতে পারবেন ভালোভাবে। সবশেষে এটাই বলবো রোগ প্রতিরোধ ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরির আগ পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রাখুন, সতর্ক থাকুন এবং ভালো থাকুন।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.