সরবরাহ চেইন খুলে দেয়া বড় চ্যালেঞ্জ!
সরবরাহ চেইন খুলে দেয়া বড় চ্যালেঞ্জ। টিকা না আসা পর্যন্ত দীর্ঘসময় থাকছে করোনা সংক্রমণ। দ্রুত বেড়েছে বেকারত্ব। এ অবস্থায় নগদ অর্থ ছাপানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ প্রফেসর অভিজিত ব্যানার্জি।
তিনি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, গরিবের জন্য যথেষ্ট করছে না ভারত। করোনাভাইরাস ইস্যুতে লকডাউনে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত যে লাখ লাখ মানুষ তাদের ত্রাণ দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতকে আরও উদার হওয়া উচিত। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ মার্কিন শিক্ষাবিদ সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, আমরা যা করেছি, তা পর্যাপ্ততার কাছাকাছিও নয়।
২০১৯ সালে সহ-গবেষক এস্থার ডাফলো ও মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান প্রফেসর অভিজিত। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে অর্থনীতির প্রফেসর। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার যথার্থই পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু লকডাউন এ কাহিনীর শেষ নয়। যতদিন এ ভাইরাসের টিকা না আসছে ততদিন, হয়তো দীর্ঘ সময় আমাদের সংক্রমিত করে যাবে তা।
এ টিকা দ্রুত আসছে বলে মনে হয় না। তাই আগামীতে পদক্ষেপ কি হওয়া উচিত তা পরিষ্কারভাবে, সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পনা করতে হবে ভারতকে। অর্থনীতি এরই মধ্যে মন্দায় পড়েছে, যেখানে শুধু চাহিদা বাড়ছে। করোনাভাইরাস মহামারী মানুষকে ডাবল সংকটে ফেলেছে। বহু মানুষ উপার্জনের সক্ষমতা হারিয়েছেন। উপরন্তু বেড়েছে চাহিদা।
অভিজিত ব্যানার্জি আরও বলেন, আয় বন্ধ হওয়ার কারণে যেসব মানুষ দারিদ্র্যের মুখোমুখি হচ্ছেন তাদের উদ্ধারে আরও বেশি অর্থ খরচে ভারত সরকারকে উদার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, আমি জানি যে, যখন মার্কেটগুলো বন্ধ তখন মানুষদের অর্থ দেয়া হচ্ছে। এই অর্থের ব্যবহার কি, এ নিয়ে উদ্বেগ আছে আমি জানি। কিন্তু শুরুতেই জনগণকে আপনার বলতে হবে যে, অর্থ আসছে, তা দিয়ে কি করবে তার একটি চাহিদা তৈরি করতে।
জনগণ নিশ্চয়তা চায়। তাদের নিশ্চয়তা দিতে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে সরকারকে। যখন পণ্য ও সেবা গ্রহণের ক্ষেত্র সহজ করা হবে, এগুলো খুলে দেয়া হবে তখন জনগণের হাতে অর্থ যাওয়া দরকার ও সেই অর্থ ব্যয় হওয়া দরকার। প্রফেসর অভিজিত বলেন, এরই মধ্যে ভারতে কেন্দ্রীয় অনেক কল্যাণমূলক স্কিমের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে লাখ লাখ বাড়ি। এসব বাড়ি এমন সরাসরি আর্থিক সহায়তার সুযোগ পেতে পারে।
এ সুবিধার বাইরে যে বৃহৎ জনগোষ্ঠী থাকবেন তাদের শনাক্ত করতে হবে স্থানীয় রিপোর্টিং ম্যাকানিজমের মাধ্যমে এবং তাদের পকেটে যাতে অর্থ যায় এটা নিশ্চিত করতে হবে। এসবই হল সংকট সমাধানের উপায়। সব সময় এটা যর্থার্থ নয় যে, কে সুবিধা পাওয়ার যোগ্য আর কে যোগ্য নয় তা নির্ধারণ করা। তবে এ সময়ে আমরা শতভাগ খাঁটি কাজ করার চেষ্টা করছি না। জরুরি অবস্থা চলছে। তিনি মনে করেন, কল্যাণমূলক সুবিধা বিস্তৃত করতে তহবিল বড় বানানোর জন্য নতুন করে রুপি ছাপানোর বিষয়ে ভীত হওয়া উচিত নয় ভারতের।
যুক্তরাষ্ট্র এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে যে, তারা ডলার ছাপতে পারে এবং তা ব্যয় করবে। আমি জানি না ভারত কেন সেটা করছে না। সম্ভবত এক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির আতঙ্ক আছে। কারণ যখন পর্যাপ্ত পণ্য ও সেবা সরবরাহ নেই তখন নগদ অর্থ এলে তাতে এ মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে পারে। কিন্তু আয়ে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে একটি সেতুবন্ধ গড়তে হবে ভারতকে।
প্রফেসর অভিজিত বলেন, কিভাবে সরবরাহ চেইন খুলে দেয়া যায়, যাতে আর কোনো সংক্রমণ সৃষ্টি না হয়, আর কোনো মৃত্যু না হয়, এমন সংক্রমণ ও মৃত্যু হলে তাতে আবার লকডাউন আসতে পারে- এসবই হওয়া উচিত এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে শতকরা মাত্র ১.৫ ভাগ থেকে ২.৮৯ ভাগের মধ্যে। নিরপেক্ষ সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এখানে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রুতগতিতে। লেখক : নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.