খ্যাপাটে, চতুর নাকি লোভী ছিলেন কলম্বাস!
১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর ইতালিয়ান নাবিক এবং ভাগ্যান্বেষী ক্রিস্টোফার কলম্বাস বাহামা দ্বীপপুঞ্জের বালুকাময় তটভূমিতে প্রথমবারের মতো পা রাখেন এবং সেখানে একটি স্প্যানিশ রাজকীয় পতাকা উত্তোলন করেন। নতুন এই ভূমিটিকে তিনি তার রাজা ফার্দিনান্দ এবং রানী ইসাবেলার বলে ঘোষণা করেন। কলম্বাস ভেবেছিলেন তিনি জাপানের মাটিতে পা রেখেছেন। কিন্তু তিনি আসলে পা রেখেছিলেন নতুন এক পৃথিবীতে যার নাম আমেরিকা। নিজের অজান্তেই তিনি ইউরোপের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আমেরিকার সংযোগ স্থাপন করেছিলেন।
কোথায় নেমেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক
ঐতিহাসিকভাবে দাবি করা হয়, ইউরোপিয়ান নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকার বাহামা দ্বীপপুঞ্জের সান সালভাদরে প্রথম জাহাজ থেকে নেমেছিলেন। তবে কলম্বাস আমেরিকা মহাদেশের ঠিক কোথায় প্রথম পা রেখেছিলেন তা নিয়ে শত শত বছর ধরে বিতর্ক চলেছে। আমেরিকার অন্তত ১০টি স্থানের মানুষ দাবি করেন, কলম্বাস তাদের অঞ্চলেই প্রথম পদধূলি দেন। এখন একদল ইতিহাসবিদ এবং সমুদ্র অভিযাত্রী প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, কলম্বাস ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করে মধ্য আমেরিকায় পৌঁছে সেখানকার গ্র্যান্ড টার্ক দ্বীপেই প্রথম অবতরণ করেন। এই দ্বীপটি টার্কস অ্যান্ড কেকস দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী। টার্কস এবং কেকস দ্বীপের একদল অভিযাত্রী ঠিক করেছেন, কলম্বাস যে পথ ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পৌঁছেন সেই একই পথ ধরে তারাও যাত্রা করবেন।
তাদের হাতে থাকবে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ব্যক্তিগত ডায়েরি এবং তার সেই বিখ্যাত সমুদ্র অভিযানের লগবই। তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন যে কলম্বাস আর অন্য কোথাও অবতরণ করেননি।
পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে মাথাব্যথা
অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন, পৃথিবীর আকৃতি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন কলম্বাস। কিন্তু আরেক দল ইতিহাস বিশেষজ্ঞের মতে, অভিযানের সময় পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে কলম্বাসের কোনো মাথাব্যথাই ছিল না। কারণ খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকেই গোলাকার পৃথিবীর ধারণা দিয়েছিল প্রাচীন গ্রিকরা। প্রায় ২০০ বছর পর এই দাবিটিকে জোরালোভাবে তুলে ধরেন গ্রিক গণিতজ্ঞ পিথাগোরাস। অষ্টম শতকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাহায্যে দার্শনিক অ্যারিস্টটলও গোলাকার পৃথিবীর ধারণা দেন। তাই ১৪৯২ সালে এটা কারও অজানা ছিল না যে, পৃথিবী প্যানকেকের মতো চ্যাপ্টা নয়, বরং গোল।
নাম না জানা নাবিক
কিছু কিছু ইতিহাসবিদ ধারণা করেন সমুদ্রের ওপারে যে আরও নতুন নতুন দেশ আছে সে সম্পর্কে কলম্বাসকে গোপন তথ্য সরবরাহ করেছিলেন তারই এক নাবিক বন্ধু। ইতিহাসে কলম্বাসের এই বন্ধুটিকে সবসময় নাম না জানা নাবিক হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ইতিহাসবিদরা কলম্বাসের এমন বন্ধু সম্পর্কে কোনো প্রমাণ পাননি।
আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া প্রথম ব্যক্তি নন!
ঐতিহাসিক দলিলপত্রে কলম্বাসকেই প্রথমবারের মতো আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া কোনো নাবিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে, এটি সত্য নয় বলে দাবি করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, আইসল্যান্ডের অনুসন্ধানী ও অভিযাত্রী লিফ এরিকসন ১০০০ খ্রিস্টাব্দেই
প্রথমবারের মতো আমেরিকা মহাদেশের নিউ ফাউন্ড অঞ্চলে পা রেখেছিলেন। এই এলাকাটি বর্তমানে কানাডায় অবস্থিত। আরও দাবি করা হয়, আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া প্রথম ব্যক্তি এরিকসন নন। তার বহু আগেই আয়ারল্যান্ডের অভিযাত্রী সেইন্ট ব্রেন্ডন এবং কিছু কেল্টিক নাবিক এই অভিযান সম্পন্ন করেছিলেন। তবে মজার ব্যাপার হলো- কলম্বাস উত্তর আমেরিকার মূল ভূমিতে পা না রাখলেও তার আগমনের দিনটিকে মহাসমারোহে স্মরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। অন্যদিকে, এরিকসনের আমেরিকায় পা দেওয়ার তারিখ ‘৯ অক্টোবর’ অনেকটা নীরব নিভৃতেই কেটে যায়।
আসল নাম এটা নয়
ক্রিস্টোফার কলম্বাস নামটি তার প্রকৃত নাম নয়। এটিকে তার প্রকৃত নামের ইংরেজি সংস্করণ বলা যায়। তাকে নিয়ে গবেষণা করা বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ দাবি করেন, কলম্বাসের জন্ম হয়েছিল ইতালির জেনোয়া অঞ্চলে এবং জন্মের পর তার নাম রাখা হয় ক্রিস্টোফরো কলম্বো। পরে তিনি যখন স্পেনে থিতু হন তখন সেখানে তার নামটি পরিবর্তিত হয়- ক্রিস্টোবাল কলোন নামে। আমেরিকানরা বিভিন্ন নথিপত্রে তার নামটিকে ক্রিস্টোফার কলম্বাস হিসেবে লিপিবদ্ধ করে এবং এই নামেই এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে তিনি পরিচিত।
যাত্রা শুরুর আগে
ইউরোপ থেকে এশিয়ায় আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন কলম্বাস। কিন্তু এই ধরনের অভিযান পরিচালনা করার জন্য ইউরোপ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা সহজ ব্যাপার ছিল না। অভিযানের খরচ সংগ্রহের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি দেশের রাজ আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন। পর্তুগালের রাজাকেও তিনি অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ ইউরোপিয়ান শাসকই ভাবলেন তিনি একটা উন্মাদ। তিনি সবচেয়ে বেশি সময় দেন স্পেনের রাজকীয় আদালতে। স্পেনের রাজা ফার্দিনান্দ সমুদ্র অভিযানের খরচ দেবেন বলে তার বিশ্বাস ছিল। কিন্তু এখানেও হতাশ হয়ে যখন ফ্রান্সের উদ্দেশে রওনা দেবেন তখনই স্প্যানিশ রাজা ফার্দিনান্দ কলম্বাসের অভিযাত্রার অনুমোদন দেন।
গণিতে সম্ভবত দুর্বল ছিলেন
কলম্বাস যে সময় অভিযান পরিচালনা করেছিলেন সে সময় পৃথিবীর সঠিক আকার সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা ছিল না। ফলে সে সময়গুলোতে সমুদ্র অভিযানে অনেক অনুমান নির্ভর সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হতো। অক্ষাংশ পরিমাপের জন্য সে সময় মাত্র দুটি পদ্ধতি চালু ছিল। এর একটি আবিষ্কার করেছিলেন গ্রিক দার্শনিক পসিডোনিয়াস, অন্যটি আবিষ্কার করেছিল মধ্যযুগীয় আরবরা। কলম্বাস দুটি নকশাই সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, এই নকশাগুলোতে আরব মাইলের চেয়ে রোমান মাইলের হিসাব কম ছিল। সে অনুযায়ী, আরব্য পরিসংখ্যানের তুলনায় রোমান পরিসংখ্যানে পৃথিবী ২৫ শতাংশ ছোট ছিল। তিনি রাজা ফার্দিনান্দকে বুঝিয়েছিলেন তার ছোট্ট কাঠের জাহাজটি মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে জাপানে পৌঁছাতে পারবে, তা প্রকৃতপক্ষে একটি অসম্ভব কাজ। কিছু কিছু গবেষক মনে করেন, এই ভুল হিসাবটি কলম্বাস ইচ্ছা করেই দিয়েছিলেন।
আছে প্রতারণার অভিযোগও
১৪৮২ সালের ঐতিহাসিক সমুদ্রযাত্রায় ক্রিস্টোফার কলম্বাস ঘোষণা করেছিলেন, যদি কেউ প্রথম কোনো ভূমি দেখার দাবি করে তবে তাকে স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করা হবে। তার জাহাজের নাবিকদের মধ্যে একজন ছিলেন রদ্রিগো ডি ত্রিয়ানা। অভিযানের বছর ১২ অক্টোবর তিনিই প্রথম বাহামা দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপকে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। কলম্বাস সঙ্গে সঙ্গে ওই দ্বীপের নামকরণ করেন সান সালভাদর। তবে, কলম্বাস তার কথা রাখেননি। জানা যায়, প্রথম ভূমি দেখার পুরস্কারস্বরূপ রদ্রিগোকে তিনি কোনো স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করেননি। উল্টো তিনি দাবি করেন, রদ্রিগোর আগেই দ্বীপটির অস্পষ্ট তটরেখা তার চোখেই প্রথম ধরা পড়েছিল। যদিও একথা তিনি কাউকে বলেননি। তাই পুরস্কারের অর্থ তিনি নিজের কাছেই রেখে দেন। তবে, ইতিহাস রদ্রিগোকে ঠিকই পুরস্কৃত করেছিল। স্পেনের সেভিলে পার্কে তার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিল।
বেশিরভাগ যাত্রাই দুর্যোগ কবলিত
ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অর্ধেকের বেশি সমুদ্রযাত্রাই দুর্যোগের কবলে পড়ে ব্যর্থ হয়েছিল। এমনকি ১৪৯২ সালের বিখ্যাত অভিযানে থাকা কলম্বাসের সান্তা মারিয়া জাহাজটিও আটলান্টিক সাগরের অগভীর চরে আটকে যায়। উপায়ান্তর না দেখে তিনি তার বহরের ৩৯ জন নাবিককে হাইতির ‘লা নাভিদাদ’ বন্দরে ফেলে গিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, জাহাজ ভরে নানা রকমের মসলা এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে স্পেনে ফিরে যাবেন। কিন্তু এসবের কিছু হলো না শেষ পর্যন্ত। কারণ স্পেনে তিনি ফিরেছিলেন একেবারে শূন্য হাতে। উপরন্তু তার বহরের গোটা দুয়েক জাহাজও ফেলে আসতে হয়েছিল সমুদ্রের বুকে। নতুন ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে স্প্যানিশ রাজতন্ত্রকে দেওয়া তার আশ্বাসও ফলপ্রসূ হয়নি। ১৫০২ সালে তার চতুর্থ সমুদ্র যাত্রায় প্রধান জাহাজটির কাঠে পচন ধরে গিয়েছিল। ফলে তাকে তার লোকজনসহ জ্যামাইকায় অন্তত এক বছর অবস্থান করতে হয়।
বাঁচিয়ে দিয়েছিল চন্দ্রগ্রহণ
১৫০৪ সালে জ্যামাইকায় আটকে পড়ে কলম্বাস এবং তার দলটির যখন অসহায় দিন কাটছিল তখন আরও এক নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়। কারণ জ্যামাইকার স্থানীয় মানুষ ততদিনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে বিদেশি নাবিকদের ভরণ-পোষণ করতে করতে। তারা কলম্বাস আর তার দলকে কোনো খাবার সরবরাহ করবে না বলে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেয়। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে একদিন তিনি তার বর্ষপঞ্জিটি নেড়েচেড়ে দেখছিলেন। এসময়ই তিনি আবিষ্কার করলেন শিগগিরই একটি চন্দ্রগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই তার মাথায় একটি দুষ্টবুদ্ধি এলো। স্থানীয় মানুষদের মাঝে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘আমার ঈশ্বর তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছে। আর এজন্য শিগগিরই আকাশের চাঁদটি ক্রোধে লাল হয়ে যাবে। তোমরা আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছো।’ প্রত্যাশিত রাতেই চন্দ্রগ্রহণ শুরু হলো। গ্রহণের প্রভাবে চাঁদটি ধীরে ধীরে লাল বর্ণ ধারণ করল। ভীতসন্ত্রস্ত আদিবাসীরা কলম্বাসের কাছে এলো এবং তাকে ভরণ-পোষণের সব দায় নিজেদের কাঁধে নিল। বিনিময়ে ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য তারা কলম্বাসের সাহায্য প্রার্থনা করল।
ভালো নেতা, ব্যর্থ শাসক
নতুন নতুন ভূমি আবিষ্কারের পুরস্কার হিসেবে স্পেনের রাজা ফার্দিনান্দ ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে নতুন আবিষ্কৃত সান্টো ডমিঙ্গোর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসক হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিম্নমানের। তিনি এবং তার ভাইয়েরা গভর্নর নয়, বরং রাজার মতো করেই সান্টো ডমিঙ্গোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। শুধু তাই নয়, ওই এলাকার অনেক মূল্যবান সম্পদ পাচার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এই ধরনের কর্মকা- এবং স্থানীয়দের ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতনের কারণে নিজের প্রশাসনের লোকজনই খেপে উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। তাদের কেউ কেউ স্পেনে নালিশ পাঠায় রাজা ফার্দিনান্দের কাছে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, শেষ পর্যন্ত কলম্বাসকে সরিয়ে নতুন গভর্নর নিয়োগ দেয় স্প্যানিশ আদালত। কলম্বাসকে গ্রেপ্তার করে স্পেনে নিয়ে যাওয়া হয়। জেলের ভেতর থেকে রানী ইসাবেলাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন তিনি। চিঠি পড়ে রানীর দয়া হয় এবং তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
দাস ব্যবসায়ী
১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কারের পর আরও তিনবার আমেরিকার উদ্দেশে সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করেন কলম্বাস। এই অভিযানগুলোর মাধ্যমে তিনি একবার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে, একবার দক্ষিণ আমেরিকায় এবং আরেকবার মধ্য আমেরিকায় পা রাখেন। তার এসব সমুদ্রযাত্রার প্রধান কারণ ছিল সম্পদ আহরণ। কিন্তু যখন সোনা, রুপা, মুক্তা এবং অন্যান্য মূল্যবান গুপ্তধনের সন্ধান লাভে ব্যর্থ হন তখন তিনি আদিবাসীদেরই জাহাজ ভরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তবে, রানী ইসাবেলার একটি ঘোষণা তাকে হতাশ করে। রানী ঘোষণা করেছিলেন, নতুন আবিষ্কৃত ভূমির মানুষেরা তার প্রজা, কিন্তু দাস নয়। রানীর তরফ থেকে এমন ঘোষণা না এলে লোভী কলম্বাসের কারণে ইতিহাস অন্যরকম হতো।
ঈশ্বরে অগাধ বিশ্বাস
পাগল, খ্যাপাটে কিংবা লোভী যা-ই বলা হোক না কেন, ঈশ্বরে প্রবল বিশ্বাসী ছিলেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তিনি যেসব দ্বীপ আবিষ্কার করেছিলেন সেগুলোর প্রত্যেকটির নাম সেইন্টদের নামে রেখেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, আবিষ্কারের জন্য ঈশ্বরই তাকে নির্বাচন করেছেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি গির্জার ধর্মীয় ব্যক্তিদের মতো পোশাক পরতে শুরু করেছিলেন। এসময় তাকে একজন ধনি অ্যাডমিরালের বদলে বরং একজন সন্ন্যাসীর মতো দেখা যেত। তিনি একটি স্বর্গীয় উদ্যান স্থাপনেরও পরিকল্পনা করেছিলেন।
মায়ানদের দেখে ভীত হয়েছিলেন!
মধ্য আমেরিকার উপকূল আবিষ্কারের সময় কলম্বাসের দলটির সঙ্গে একটি বণিক জাহাজের দেখা হয়েছিল। ওই জাহাজে থাকা লোকদের হাতে থাকা যন্ত্রপাতি এবং অস্ত্রশস্ত্রগুলো তামা এবং এর মতো কঠিন কোনো বস্তু দিয়ে তৈরি ছিল। সেই জাহাজে বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে কাপড় এবং বিয়ারের মতো গাঁজানো পানীয় ছিল। খুব সম্ভবত ওই জাহাজটি ছিল উত্তর-মধ্য আমেরিকার মায়া সভ্যতার মানুষের। কলম্বাস অবশ্য এটি নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে সাহস দেখাননি, বরং তাদের বিপরীত দক্ষিণের দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন।
মরেও ঘোলা জলে
ক্রিস্টোফার কলম্বাস মারা যান ১৫০৬ সালে। প্রাথমিকভাবে তাকে সমাহিত করা হয় স্পেনের ভেলাডলিড শহরে। পরে অবশ্য তার দেহাবশেষ সেভিলেতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ১৫৩৭ সালে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে সেই সান্টো ডমিঙ্গোতে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে গভর্নর ছিলেন তিনি। ১৭৯৫ সালে সান্টো ডমিঙ্গো স্প্যানিশদের কাছ থেকে দখল করে নেয় ফরাসিরা। পরে ওই দ্বীপে থাকা কলম্বাসের দেহাবশেষ খনন করে কিউবায় স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ১৮৭৭ সালে সেভিলের একটি গির্জার পাশে কলম্বাসের নাম লেখা একটি কফিন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ঘটনার প্রায় ১২৯ বছর পর ২০০৬ সালে ওই কফিনে থাকা দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা যায় এটি আসলে কলম্বাসেরই। তাহলে সান্টো ডমিঙ্গোতে কি ভুল মানুষের লাশ নিয়ে গিয়েছিল স্প্যানিশরা? ঐতিহাসিকরা ওই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন আজও।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.