সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    মাছ চাষে পিএইচের ( pH ) প্রভাব কি!

    fish-in-20200118144208

                            

    pH কি : এসিড এবং ক্ষারের পরিমাপ কে pH বলা হয়। 

    pH স্কেল কি: pH এর কোন একক নেই। তবে এর একটা পরিমাপক স্কেল রয়েছে যার সীমা ১ – ১৪ এর মধ্যে থাকে। আর এই স্কেল এর মধ্যম মান হচ্ছ ৭, আর এই মানকে প্রশমন বলা হয় অর্থাৎ এই মান এসিড বা ক্ষারীয় কোন বৈশিষ্ট্য বহন করে না। pH স্কেল এর মান ৭ এর নিচে হলে তা এসিটিক এবং তার উপরে হলে ক্ষারীয়। চাষের জন্য মৃদু ক্ষারীয় অবস্থা ভালো।  মাছ চাষের আদর্শ pH : মাছ চাষে পুকুরে পানির pH ৭.০ – ৮.৫ ভাল।

    pH কমার কারণ :  

    ক) পুকুরের অব্যবহৃত বা অতিরিক্ত খাদ্য  ও জৈব পদার্থ  অ্যান অ্যারোবিক (Anaerobic) ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা ভেঙ্গে জৈব এসিড তৈরি হলে পিএইচ কমে যায় । 

    খ) পুকুরের মাটি এসিটিক হলে অথবা পুকুরের তলায় হাইড্রোজেন গ্যাস জমা হলে।  

    গ) বৃষ্টি বা জলাশয়ের আশেপাশের ধৌত হয়ে আসা খনিজ এসিড বা সালফিউরিক এসিড পানিতে পড়লে পিএইচ কমে যায়।

    pH কেন বৃদ্ধি পায়: 

    ১. অতিরিক্ত খাদ্যের পঁচনের ফলে। 

    ২. প্ল্যাঙ্কটন ব্লুম হয়ে তা পঁচে গিয়ে। 

    ৩. মাছের মল বা জৈব অংশের পঁচন। 

    ৪. ক্ষার জাতীয় পদার্থের মাত্রাধিক ব্যাবহার। 

    ৫. অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট, নাইট্রাইট গ্যাসজনিত কারণ। 

    ৬. পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রীর নিচে নেমে গেলে। 

    ৭. পানিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেশি সার প্রয়োগ করলে। 

    নিম্নে   Swingle (1969) এর মতে মাছ ও জলজ জীবের উপর পিএইচের প্রভাব দেয়া হলো---- 

    পিএইচ  ( pH )            ফলাফল  

    ১) ৪.0                         অম্লীয় কারনে মাছ  মারা  যায় । 

    ২) ৪.০---৫.০               মাছের প্রজনন হয় না । 

    ৩) ৪.০---৬.৫               মাছ ধীরে বৃদ্ধি পায় । 

    ৪) ৬.৫---৯.০               মাছের ভাল ভাবে বৃদ্ধি হয় । 

    ৫) ৯.০---১১.০               মাছের ধীরে বৃদ্ধি হয় । 

    ৬) ৯.৫---১১.০              মাছের প্রজনন হয় না । 

    ৭)  >১১.০                      ক্ষারীয় কারনে মাছের মৃত্যু হয় ।

     পিএইচ ( pH ) নিয়ন্ত্রণঃ  

    পিএইচ কমে গেলে বাড়ানোর জন্য যা করনীয়ঃ   

    ১) পানিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে । প্রতিবার চুন প্রয়োগ করে তার ২/৩ দিন পর পিএইচ পরিমাপ করতে হবে । পিএইচ কাঙ্খিত মাত্রায় না পৌছা পর্যন্ত চুন আরও প্রয়োগ করতে হবে ।  

    ২) পানিতে সার প্রয়োগ করে বা অধিক খাদ্য প্রয়োগ করে পানিতে ফাটোপ্লাংক্টন তৈরি করলে পানির পিএইচ বেড়ে যাবে । 

    পিএইচ বেড়ে গেলে কমানোর জন্য যা করনীয়ঃ  

    ১)  পুকুরে খাদ্য  প্রয়োগের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে বা কয়েক দিন বন্ধ রেখে পানির পুষ্টির পরিমান কমিয়ে দিলে পিএইচ কমে যাবে । 

    ২)   পুকুরে পরিস্কার / স্বচ্ছ পানি প্রবেশ করিয়ে ধৌত ( Flushed ) করলে পিএইচ কমে যাবে ।  

    ৩)  পুকুরে ফাইটোপ্লাংক্টনের পরিমান বেশি থাকলে বা ব্লুম হলে  পুকুরে মাছ থাকা অবস্থায় প্রতি শতাংশে ৫০০-৭৫০ গ্রাম করে চুন ( পাথুরে - CaO) সন্ধ্যার সময় ৩/৪ দিন পরপর ২/৩ বার প্রয়োগ করলে পুকুরের বিকালের পিএইচ আস্তে আস্তে কমে যাবে । 

    ৪)  প্রতি শতাংশে ১-২ কেজি হারে জিপসাম (CaSo4,2 H2O) অথবা  প্লাস্টার অফ প্যারিস ( CaSo4)2, H2O পানিতে প্রয়োগ করলে পিএইচ কমে যাবে । তবে কাঙ্খিত মাত্রায় পিএইচ নেমে না আসা পর্যন্ত একাধিকবার প্রয়োগ করতে হবে। এই মাত্রায় জিপসাম প্রয়োগ মাছের জন্য নিরাপদ । 

    ৫)  অ্যালাম বা ফিটকারি { AL2(So4)3,14 H2O } প্রতিশতাংশে  ৫০০-১০০০ গ্রাম গুড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিলে পিএইচ কমে যাবে । পিএইচ কাঙ্খিত মাত্রায় নেমে না আসা পর্যন্ত একাধিক বার প্রয়োগ করতে হবে । এই মাত্রায় ফিটকারি প্রয়োগ মাছের জন্য নিরাপদ । 

    উপসংহার: পানিতে শুধুমাত্র কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমান  হ্রাস বা বৃদ্ধির কারনে পানির পিএইচ কম বা বেশি হয়ে মাছ মারা যাবে না । তবে কার্বনেটের আধিক্যের কারনে পিএইচ ১১ এর উপরে উঠে যায় তখন মাছ মারা গিয়ে থাকে । সুতরাং কার্বনডাই অক্সাইড ও কার্বনেটের পরিমান নিয়ন্ত্রন করে পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রন করা যায়।পানিতে এয়ারেশন করে পানির বেশিরভাগ pH নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

    মাছের রক্তের পিএইচ ৭.৪ । মাছ শীতল  রক্ত বিশিষ্ট প্রাণি বিধায় জলজ পরিবেশের উপর মাছের জৈবিক ও শারীরবৃত্তিয় সকল কার্যক্রম নির্ভরশীল । এজন্য পানির পিএইচ মাছের রক্তের পিএইচের কাছাকাছি রাখতে না পারলে চাষের সময় মাছের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !