ফোন না ধরায় চটলেন মোদি, কড়া জবাব দিলেন মমতা
চলমান লোকসভা নির্বাচন নিয়ে এমনিতেই সরগরম ভারতের রাজ্য-রাজনীতি। সেই উত্তাপ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। ভারতে ধ্বংসলীলা চালানোর পর ফণী আপাতত দেশছাড়া হলেও এবার ফনী-ফোনালাপ নিয়ে মোদি-মমতার নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে। গত ৩ এপ্রিল শনিবার ‘ফণী’ আছড়ে পড়ার আগেই সকালের দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে দু'বার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করা হয়। কিন্তু দুইবারই রাজ্য সরকার জানায় মুখ্যমন্ত্রী এখন কথা বলতে পারবেন না। তিনি প্রচারে রয়েছেন। ফিরে এসে ফোন করবেন। মুখ্যমন্ত্রীকে না পেয়েই এরপর রাজ্যটির রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সাথে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী এবং ট্যুইট করে সেকথা জানিয়েও দেন তিনি।
ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী আসার আগে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।’ প্রধানমন্ত্রী এও জানান তিনি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক ও রাজ্যপাল গণেশ লালের সাথেও কথা বলেছেন। আর এতেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় অবকাঠামোকে বুড়ে আঙুল দেখিয়ে ফণীর পরিস্থিতি এবং তার মোকাবিলা করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি মুখ্যমন্ত্রী মমতার সাথে কথা না বলে কেবলমাত্র রাজ্যটির রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির সাথে কথা বলে দায় সেরেছেন। এটা এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পাল্টা বিবৃতিতে বলা হয় তৃণমূলের দাবি সঠিক নয়। স্পষ্ট জানানো হয় অসৌজন্য দেখিয়েছে রাজ্য সরাকরই।
সোমবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সফরে এসে মোদি সেই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, মমতা ‘ফণী’ নিয়ে সস্তার রাজনীতি করছেন। এদিন তমলুকে এক নির্বাচনী জনসভা থেকে মোদি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি নিয়ে আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দিদির অহংকার এতটাই বেশি যে তিনি আমার সাথে কথা বলেননি। আমি অপেক্ষা করছিলাম যে দিদি হয়তো একবার আমায় ফোন ব্যাক করবেন, কিন্তু তা তিনি করেননি। আমি দ্বিতীয়বার তাকে ফোন করি। আমি রাজ্যের মানুষের জন্য চিন্তায় ছিলাম, এর জন্য তার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দিদি দ্বিতীয়বারের জন্যও আমার সাথে কথা বলেননি। আসলে দিদি রাজনীতি নিয়েই বেশি চিন্তিত, রাজ্যের মানুষের জন্য তার চিন্তা নেই। এই স্পিডব্রেকার দিদির কারণেই পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন থমকে গেছে।’
এমনকি ‘ফণী’ পরবর্তী সময়ে বাংলার পরিস্থিতি জানতে রাজ্যের সাথে বৈঠকেও বসতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী কিন্তু কলাইকুন্ডার ওই বৈঠকে ওড়িশা যোগ দিলেও তাতে রাজ্য কোন আগ্রহ দেখায়নি বলেও অভিযোগ করেন মোদি। এদিন দুপুরেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আকাশপথে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।
ফণী-ফোন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরই পাল্টা আঘাত হেনেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। উল্টো 'এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি করছেন' বলে অভিযোগ মমতার। জঙ্গলমহলে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে মমতা বলেন, ‘চলমান নির্বাচনে আমি আপনার সাথে এক মঞ্চ শেয়ার করবো না, আমি আপনাকে একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মানি না। যখন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসবেন, তখন আমি তাকেই বলবো।’
ক্ষুব্ধ মমতা আরও জানান ‘আমরা কি তার (মোদি) চাকর যে তিনি আমাকে ফোন করবেন আর আমি ছুটে চলে যাবো।’ বৈঠকের ব্যাপারে দিল্লি থেকে রাজ্যকে পাঠানো একটি চিঠির উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘আমরা আপনার কাছ থেকে কোন ভিক্ষা চাই না। আমি আমার রাজ্যের তহবিল থেকেই সাহায্য করতে পারবো। আপনি কিভাবে একজন মুখ্যমন্ত্রীকে প্রত্যাখান করে রাজ্যের প্রধান সচিবকে বৈঠকে ডাকেন। আপনি সাহস পেলেন কিভাবে? এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় অবকাঠামো। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আপনি বৈঠক ডাকলেন কিভাবে? আমি আপনার সাহায্য চাই না।’
সব মিলিয়ে ভারতে সাত পর্বের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন সময়েই নতুন ইস্যুতে রাজ্য-রাজনীতি সরগরম মোদি-মমতার এই বাগযুদ্ধে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.