সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    বাকশাল_নিয়ে_যুগ_যুগ_পরিকল্পিত_মিথ্যাচার!!


    বঙ্গবন্ধুর প্রায় সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে (১৯৭২থেকে১৯৭৫) বেশ কিছু রাজাকার-আলবদর, কয়েকটি চরমপন্থী বাম দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আর জাসদ গণবাহিনীর বেশ ক'জন সদস্যের নিহত হওয়ার কথা আওয়ামী-বিরোধীদের মুখে আহরনই শোনা যায়। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়মী লীগ সেই সময়কালে রাষ্ট্রযন্ত্রসমূহ এবং দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে ব্যবহার করে দেশজুড়ে ব্যপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছিলো👉এমন কথা।
    সুযোগ পেলেই মুখস্থ বলে মুখে ফেনা তোলেন👉এমন।
    "বুদ্ধিজীবী" এদেশে ভুরি ভুড়ি রয়েছেন; তারা এসব কথা এখনো শুনিয়ে যাচ্ছেন।


    কিন্তু,'৭২থেকে-৭৫ সাল সময়কালে আওয়ামী লীগের কতজন নেতা-কর্মী খুন হয়েছিলেন। তার হিসাবও কেন আওয়ামীপন্থীদের মুখে মাঝেমধ্যে শুনি না?

    বিস্ময়কর হলেও সত্য, বঙ্গবন্ধুর ৩-বছর-৭-মাস-৩-দিনের শাসনামলে মোট আট জন সংসদ সদস্যই খুন হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তো '৭২ সালে ক্ষমতায় বসেই বাকশাল নামে তথাকথিত একনায়কতন্ত্রটি কায়েম করেননি? তবে কেন '৭২-এ বঙ্গবন্ধু শাসনভার কাঁধে নেয়া মাত্রই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যসহ নেতা-কর্মীদের খুন করার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল? আর, কারাই বা সেই হিড়িক ফেলেছিলো?

    প্রথমে প্রকাশন থেকে প্রকাশিত, আনোয়ার উল আলমের লেখা (রক্ষী বাহিনীর সত্য-মিথ্যা) গন্থ থেকে একটি অংশ উদ্ধৃত করছি 'চরম বামপন্থী, নকশাল বহিনী, সর্বহারা ও জাসদের গণবাহিনীর হাতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী নিহত হন। নিহতরা হচ্ছেন?

    ১৯৭২ সালের ৬ জুন সংসদ সদস্য আব্দুল বফুর নিহত হন। তাঁর সঙ্গে ছিল কামল ও রিয়াজ নামের দুজন, তারাও নিহত হয়। আব্দুল গফুর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে খুলনা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
    ১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি নিহত হন সংসদ সদস্য সওগাতুল আলম সগির। তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে মঠবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
    ১৯৭৩ সালের ৩ মে সংসদ সদস্য নুরুল হক নিহত হন। তিনি ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নড়িয়া থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
    ১৯৭৪ সালের ১০ জানুয়ারি নিহত হন সংসদ সদস্য। মোতাহার উদ্দীন আহমেদ, তিনি ভোলা থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
    ১৯৭৪ সালের ১৬ মার্চ সংসদ সদস্য গাজী ফজলুর রহমান নিহত হন। তিনি ছিলেন নরসিংদী মোনহরদী এলাকা থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
    ১৯৭৪ সালের ১ আগস্ট সংসদ সদস্য এডভোকেট ইমাম আলী নিহত হন। তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং ময়মনসিংহ কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
    ১৯৭৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ঈদের নামাজ পড়ার সময় নিহত হন সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া। তিনি ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
    ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংসদ সদস্য আবুল খালেক নিহত হন। তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নেত্রকোনা থেকে।

    ১৯৭২ সালের ২৯ জন, ১৯৭৩ সালে ৭৭, ১৯৭৪ সালে ৫২ জন এবং ১৯৭৫ সালের জুলাই প্রর্যন্ত ৪৪ জন আওয়ামী দলীয় এমপি অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, ছাত্রনেতা, শ্রমিকনেতা, মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

    এই যদি হয় প্রকৃত সত্য, তাহলে 'বাকশাল কায়েম' করার দোষে বঙ্গবন্ধু খুন হয়েছিলেন- এটা আদৌ বলা যায় কি? নাকি স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তান-চিন-আমেরিকা চক্র এবং সেই, চক্রের কুমন্ত্রে বিভ্রান্ত একদল মুক্তিযোদ্ধা হাতে-হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার যে কুৎসিত খেলা '১৯৭২ থেকেই শুরু করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতার শেষ ধাপটি ছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা- এটা বলাই আরও অনেক বেশী যুক্তিযুক্ত হবে?

    বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন '৭২এর ১০ জানুয়ারি, আর ৬ জানুয়ারি খুন হলেন সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর, বঙ্গবন্ধু শাসনভার বুঝে না নিতেই এমপি খুন। '৭২ থেকে' ৭৫ প্রর্যন্ত প্রতিটাই বছরই আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিসহ অগণিত জনপ্রতিনিধি আর দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে যে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিলো, তা কি খুব স্বাভাবিক ছিলো, একটি রাজনৈতিক দল, যে দলটি কিনা নেতৃত্ব দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করে দিলো, সেই দলটি রাষ্ট্রের শাসনভার নিতে না নিতেই ওই দলের নেতা-কর্মী জনপ্রতিনিধিদের নির্মমভাবে খুন করার যে লীলা তখন শুরু হয়েছিল তাতে করে আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে, তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বকে রাষ্ট্রশাসনের কোনো সুযোগই দেয়া হয়নি, বরং নিজের অস্তিত্ব বাঁচানোর সংগ্রামেই দলটির প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সর্বক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকতে বাধ্য করা হয়েছে, এটা বললে কি একবিন্দুও ভুল বলা হবে? ওরিয়ানা ফালাচি'র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর সেই উদ্বেগ স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়; যারা পড়েছেন তার নিশ্চই লক্ষ করেছেন।

    সুতরাং, এখনও যেসব জ্ঞানপাপী বঙ্গবন্ধুর হত্যার পিছনে তাঁর "বাকশাল কায়েম, করার স্বিদ্ধান্তটিকে দায়ী করেন, তারা আসলে জেনে বুঝেই এই মিথ্যা কথাটি বারবার বলেন। এই মিথ্যা বলার একটি বিশেষ সুবিধা হলো, এতে করে সহজেই এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায়; বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ওই নির্মমভাবে মারা যাওয়ার পেছনে তাঁরই একটি সিদ্ধান্ত " বাকশাল কায়েম, করাকে দায়ী করার পাশাপাশি, সেই "বাকশাল কায়েম, করার সিদ্ধান্তটি যে বঙ্গবন্ধুর একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো এবং বাকশাল প্রকৃতপক্ষে কোনও ভাল কিছু না -সেটিও পরিস্কারভাবে ইঈিত কর হয়ে যায়! একেই বিঝি বলে 'পারফেক্ট প্রোপাগান্ডা,!

    বিস্ময়কর আর দুঃখজনক হলো এই যে নব্য-হাইব্রিড কিছু মূর্খ্য আওয়ামীলীগের কথাতেও ওই মিথ্যাটির রেশ পাওয়া যায়! ইউরোপের কোনও দেশের প্রথম সারির একটি রাজনৈতিক দল হলে এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে নতুন নেতা-কর্মীদের জন্য নির্ঘাৎ নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করা হতো।আমাদের এই অভাগা দেশে সেরকমটা সম্ভব না হলেও সিনিয়র নেতারা তো অন্ততঃ কর্মীদেরকে এসব ছবক দিতে পারেন? কিন্তু হায়, পুঁজিবাদের দাপটে ছবক-টবক দেওয়ার আর সময় কোথায়?

    জেনে অবাক লাগতে পারে- এসব নব্য-হাইব্রিড-মূর্খ্য আওয়ামী লীগারের দল "বাকশাল জিনিসটা আসলে কী, তার ঠিকমতো উওরও দিতে পারে না। " বাকশাল" বিষয়ে এদের ধারণা রীতিমতো বিভ্রান্তিকর, গোলমেলে "নাম বলে খাটো করতে চাই না- মূল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জনৈক উপ-কমিটির সহসম্পাদককে " বাকশাল আসলে কী' প্রশ্ন করার পর উওর পেয়েছি "বাকশাল ছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দল, আরেক সদস্য- সাবেক ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকে একই পশ্ন করার পর তিনি উওর দিয়েছেন- " বাকশাল হচ্ছে আওয়ামী লীগের এক্সটেনশন, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ"'! এসব শুনে আমি চরম শস্কিত! আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা কি দলের এই আদর্শিক দুর্বলতার চিত্র কিছুটা আঁচ করতে পারেন? পারলে তিনিও নির্ঘাৎ আমার মতোই শস্কিত হয়ে উঠবেন।

    ভালো-মন্দ বিচার পরে "বাকশাল কী? সেটা তো আগে জানা চাই!!

    'বাকশাল' একটি শাসনব্যবস্থার নাম। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাকশালের পক্ষে থাকা লোকজন তো বটেই, এমনকি যারা বাকশালের বিরোধিতা করেন- তারাও মুখে বলার সময় বাকশালের সঙ্গে, 'কায়েম' ক্রিয়াপদটি কখনও শুনিনি বাকশাল সৃষ্টি বাকশাল তৈরী কিংবা বাকশাল প্রয়োগ অথবা বাকশাল শব্দের সঙ্গে কায়েম ব্যতীত অন্য কোনও ক্রিয়াপদ যোগ করে এর নিন্দা জ্ঞাপন করতে! অর্থাৎ বাকশাল যে কোনও দল বা গোষ্ঠী বা সিদ্ধান্ত বা নিছক সংসদের কোনও বিশেষ বিল নয়, বরং এটি যে একটি পরিপূর্ণ শাসনতন্ত্রেরই নাম- তা নিজের অজান্তেই সবাই স্বীকার করে নেন, এমন কি এর বিরোধীতাকারীরাও।

    বিধানই একমাত্র কায়েম করা যায়, আর কিছুই কায়েম করা যায় না "বাকশাল' রাষ্ট্র পরিচালনার তেমনই এক পূর্ণাঙ্গ বিধান; একটি সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা; এবং নিঃসন্দেহে। অ্যামেরিকান ডেমোক্রোস জাতীয় কোনও অাধা-খ্যাচড়া শাসনব্যবস্থা নয়।

    স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরদিন ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে এই বঙ্গবন্ধুই তো 'অস্থায়ী সংবিধান আদেশ' জারির মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় সংসদীয় পদ্ধতি সরকার ব্যবস্থ প্রবর্তন করেছিলেন! সেই বঙ্গবন্ধুই যখন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় একদলীয়, 'বাকশাল' কায়েম করেন- তখন তার পিছনে অনেক কারণ অব্যশই ছিলো; আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী জনপ্রতিনিধিদের ওই লাগাতার খুন-গুম নিখোঁজ হওয়াও নিঃসন্দেহে তার মধ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

    ইউপিএল থেকে প্রকাশিত মওদুদ আহমেদ-এর Bangladesh Era of Sheikh Mujibur Rahman গ্রন্থ থেকে জানা যায়- ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর (ধারা ১১৭/এ) মাধ্যমে বাকশাল গঠিত হয়। এটি ছিল এদেশে সমাজতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষা করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ প্রচেষ্টা। পুর্বে গৃহীত বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনার ব্যর্থতা, বৈদেশিক বিভিন্ন রকম চাপ, দেশের ভেতর চীনপন্থী নকশাল ও জাসদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সরকার বিরোধিতা ও উগ্র কার্যকলাপ, আওয়ামী লীগের ভেতরে কিছু ষড়যন্ত্রকারীর অনুপ্রবেশ, সামরিক বাহিনীর একটি অংশের অসন্তোষ, '৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বিভিন্ন কারণে বঙ্গবন্ধু তাঁর শাসনব্যবস্থা টিকিয়প রাখার স্বার্থে দেশের এক জরুরি পরিস্থিতিতে একদলীয় 'বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম' করেন। ১৯৭৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একটি দল (বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ) বাকশাল গঠন হয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষকে একীভূত করে ৭-স্তর বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। বাকশালের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন দুর্ভিক্ষ পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনৈতিকে পুনরুজ্জীবিত করার শেষ চেষ্টা চালান। মওদুদ আহমদের গ্রন্থে আরও উল্লেখ আছে, বঙ্গবন্ধু বাকশালে প্রাথমিক যে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনেন তা হলো Compulsory Co-operative Society, যাতে বলা হয়- প্রতিটি গ্রামের মানুষ এক হয়ে জমি চাষ করবে, চাষের উপকরণ দেবে সরকার, উৎপাদিত ফসল তিন ভাগে হবে, একভাগ পাবেন জমির মালিক, একভাগ চাষে নিয়োজিত শ্রমিকরা এবং আরেকভাগ সরকার।

    এই হলো 'বাকশাল'। বঙ্গবন্ধু প্রণীত এই শাসনপদ্ধতিটির সুফল-কুফল কোনটাই বোঝার মতো নুন্যতম সময়টুকুও এদেশের জনগণকে দেয়া হয়নি! কি হতো তা বোঝার আগেই, বাকশাল কায়েমের মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়; আর এতে করে বাকশাল ব্যবস্থারও পতন ঘটে

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !