সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    মসজিদ উন্মুক্ত করার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে !

    Korona

    করোনায় নাকাল সারা বিশ্ব। ২০০টির বেশি দেশে এর বিস্তার ঘটেছে। পবিত্র রমজানে তারাবির জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করা হয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি দেশে। প্রায় সারা বিশ্বেই মানুষ যার যার ঘরে তারাবি পড়ছে এবার।  আরব বিশ্বে মার্কেট, রেস্টুরেন্ট ও বাজার খোলা থাকলেও মসজিদ পুরোপুরি বন্ধ।

    এমনকি হারামাইনেও সীমিত পরিসরে তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাইরে থেকে কেউ বাইতুল্লাহ বা মসজিদে নববীতে ঢুকতে পারছে না। বিশ রাকাত তারাবি আদায় হচ্ছে দশ রাকাত।  হারামাইন ছাড়া অন্য মসজিদগুলো একেবারেই বন্ধ। এ অবস্থায় আমাদের দেশেও কথা উঠছে। গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতেই হবে।

    তা ছাড়া উপায় নেই। জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই খোলা আছে। আরও কিছু হয়ত নতুন করে খোলার অনুমতি সরকার দিয়ে দিবে।  এ অবস্থায় আমাদের আলেম সমাজের উচিত সরকারকে পূর্ণ সহায়তা করা। সরকারেরও উচিত আলেম-ওলামার দিকে খেয়াল রাখা। রমজানে মসজিদ মাদরাসা বন্ধ থাকায় চরম অর্থকষ্টে পড়তে হচ্ছে দেশের আলেমদের।

    মূলত মসজিদ মানুষের ক্ষতির জন্য নয়। মসজিদ তো মানবকল্যাণের প্রতিষ্ঠান। আল্লাহর ঘর প্রতিটি মসজিদ। মুসলমানদের হৃদয় সেখানে। ইসলামের শেয়ার বা প্রতীক।  কাজেই মসজিদ নিয়ে রাজনীতি নয়। যারা আবেগি কথা বলছেন তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোরও প্রয়োজন নেই। সচেতনতার সঙ্গে বোঝাতে হবে সবাইকে। আন্তরিকভাবে বোঝানো হলে আলেম-ওলামাও বুঝবেন। আলেমদের না বোঝালে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসল্লিরা সরকারের কথা গ্রহণ নাও করতে পারে।  ভেবে দেখতে হবে আমাদের সবাইকেই।

    মসজিদ এই মুহূর্তে বন্ধ বা সীমিত রাখলে যদি দেশের মানুষের সামান্য উপকারও হয় তাহলে অবশ্যই সে বিষয়ে ভাবতে হবে। মসজিদ খোলা রেখে যেমন বিশ্ব মানবতার কাজ করা যায় প্রয়োজনে মসজিদ বন্ধ রেখে মানুষের উপকারও করতে হবে।  শরৎচন্দ্রের কথাটি মনে পড়ছে, প্রেম শুধু কাছেই টানে না, বড় প্রেম মানুষকে দূরেও ঠেলিয়া দেয়।

    হাসপাতাল বা ফার্মেসি খোলা আছে বলে যেমন মসজিদ খোলার দাবি করা হয়নি। গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণেও মসজিদ খোলার দাবি করা ঠিক হবে না। জনসমাগম সীমিত করাই যদি বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হয় তাহলে অবশ্যই তাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সাহায্য করা উচিত।

      এ নিয়ে বিবাদ বা হুমকি দেয়া মোটেও ঠিক হবে না। অনেকে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে ফেলেছেন। তারা বুঝতে পারছেন না, সরকারে যারা কাজ করছেন তারাও আমাদের সমাজেরই লোক। তাদেরও ধর্ম আছে। 

    এই রমজানে অন্যের ব্যাপারে এতটা মন্দ ধারণা করা ঠিক হবে না। বাদ-বিবাদ না করে সবাই ঘরে বসে আল্লাহকে ডাকুন। তাওবা ইস্তিগফার করুন। আল্লাহ যদি আমাদের রক্ষা করেন করোনার বিপদ থেকে তাহলে ইনশাল্লাহ আবারও আমরা মসজিদে নিয়মিত যেতে পারব।

    প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। সাধে পড়ে লকডাউন করা হয়নি। যতদিন স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত না হয় ততদিন মসজিদ সীমিত রাখাই ভালো হবে।  বাজার বা গার্মেন্টসের সঙ্গে তুলনা না করে বাস্তবতা উপলব্ধির চেষ্টা করুন।

    স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরার অপেক্ষা করুন। ইনশাল্লাহ চিরকাল করোনা থাকবে না। আল্লাহ আমাদের ওপর করুণা করবেনই। হতাশাকে কুরআনে কুফুরি বলা হয়েছে। আল্লাহর রহমতের আশা আমাদের করতেই হবে। সে পর্যন্ত ধৈর্য ও সবরের সঙ্গে ঘরে অবস্থান করতে হবে। করোনার গজব থেকে বাঁচার জন্য সংসদেও দোয়া করেছেন সব দলের সংসদ সদস্যরা।

    জাতীয় সংসদে আর কখনও এভাবে দোয়া হয়েছে কি না জানি না। সংসদে গিয়ে যে তারা সব নাস্তিক হয়ে গেছেন এমন নয়। তাদেরও আল্লাহ-খোদার ভয় আছে।  একশ্রেণির কুচক্রী সরকার, প্রশাসন ও মিডিয়াসহ জাতীয় সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ সময় অপপ্রচার করছে। এরা যেন সবাই ইসলামের শত্রু। এ সব অপপ্রচারের কারণে সরকারকেও চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

     সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দেশ। মানুষকে বাঁচাতে হবে। বিপদ থেকে রক্ষা করতে হবে সবাইকে। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খৃস্টান সবাইকে নিয়েই বাঁচতে হবে। সারা বিশ্বের সব উপাসনালয় বন্ধ। অন্য ধর্মের উপাসনালয় বন্ধ থাকতে পারলে মুসলমানরা কী এতটাই অসহিষ্ণু? এতটাই অবিবেচক আর হুজুগে মাতাল?  অন্য ধর্মে উপাসনালয়ের বিকল্প নেই। উপাসনা করতে গির্জা প্যাগোডা বা মন্দিরে যেতে হয়।

    মুসলমানদের তো এমন নয়। নবীজী সা. বলেছেন, পুরো পৃথিবীকেই আমার জন্য মসজিদ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। [বুখারী]  প্রয়োজন হলে মসজিদে না গিয়েও প্রতিদিনের ইবাদত সম্পন্ন করা সম্ভব আমাদের পবিত্র ইসলাম ধর্মের নির্দেশনা অনুসারে। মহামারীর সময়ে তো হোম কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন আর লকডাউনের নির্দেশ হাদীসেই দেয়া আছে। 

    প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদে গেলে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে হাদীসের নির্দেশনার ওপরও আমল হবে কী না তা ভেবে দেখার মতো বিষয়। আল্লাহ আমাদেরকে আবেগের পিছনে না ছুটে সত্যিকারের ধার্মিক হওয়ার তাওফিক দিন। আমীন। 

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !