ব্রয়লার মুরগি কি?

ব্রয়লার হলো মুরগির মাংস উৎপাদনের জন্য এক বিশেষ ধরনের মুরগি যাদের দেহের ওজন ৩০ থেকে ৩৫ দিনে দেড় থেকে পৌনে দু’কেজি হয়। ঐ সময়ে এরা এক কেজি দেহের ওজনের জন্য মোটামুটিভাবে দেড় কেজি খাবার খাবে। এদের মাংস খুব নরম ও সুস্বাদু।
হাইব্রিড ব্রয়লারঃ ভারী ওজন বিশিষ্ট বিভিন্ন মোরস্তমুরগির মধ্যে মিলন ঘটিয়ে, ছাটাই বাছাই করে দীর্ঘ গবেষণার পর কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে অধিক মাংস উৎপাদনশীল হাইব্রিড ব্রয়লার তৈরি করা হয়।
ব্রয়লার জাতের নামঃ হাইব্রো পিএন, হাববার্ড ক্লাসিক, কব ৫০০, হাইব্রো পিজি + আরবার একর ও ষ্টারব্রো, ইত্যাদি।
ব্রয়লার মুরগি নির্বাচনঃ গুণগতমানের ব্রয়লার বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে; ব্রয়লারের জন্য খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে এমন মুরগির জাত সঠিক ভাবে নির্বাচন করতে হবে। কারণ সব মুরগি সমান ভাবে ওজন বাড়ে না।
ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগি পালন ব্যবস্থাপনা মুরগীর বাসস্থান মুরগির ঘরের আবশ্যকতাঃ
১. প্রতিকুল আবহাওয়া, বন্যপ্রাণী ও দুস্কৃতিকারী হতে রক্ষা করতে হবে;
২. সুস্বাস্থ্যের অনুকুল ও আরামদায়ক পরিবেশ রাখতে হবে;
৩. বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।
আদর্শ ঘরের গুণাগুণঃ
১. খোলা মেলা থাকতে হবে;
২. আলো ও বাতাস চলাচলের সুযোগ থাকতে হবে;
৩. প্রয়োজনীয় আর্দ্রতাযুক্ত হতে হবে;
৪. সহজে ঘরের গ্যাস বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে;
৫. পরিচ্ছন্ন পরিবেশ হতে হবে।
ঘরের স্থান নির্বাচনঃ
১. বন্যার পানি ওঠে না এমন উঁচু ভূমি;
২. জনবসতি হতে দূরে;
৩. হাট-বাজার, কল-কারখানা হতে নিরাপদ দূরে;
৪. যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল;
৫. উন্নত বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা;
৬. নিকটতম স্থানে বাজারজাতকরণের সুবিধা।
মুরগির ঘরের পরিবেশঃ
১. বিশুদ্ধ বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে;
২. গ্যাস বের করার সুবিধা রাখতে হবে;
৩. দূর্গন্ধ মুক্ত রাখতে হবে;
৪. আর্দ্রতা ও তাপ নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকতে হবে।
সুস্থ পরিবেশের গুরুত্বঃ
১. মুরগির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য;
২. উৎপাদন ঠিক রাখার জন্য;
৩. পালক দ্বারা শরীর পরিপূর্ণ রাখতে;
৪. খাদ্য ও পানি গ্রহণ স্বাভাবিক রাখার জন্য।
অসুস্থ পরিবেশের বিপদঃ
১. খাদ্য ও পানি পান স্বাভাবিক থাকে না;
২. বিপাকীয় কার্যাবলীতে বিঘ্ন ঘটে;
৩. ডিমের খোসা পাতলা হয়;
৪. শারীরিক বৃদ্ধি ঠিক মতো হয় না;
৫. উৎপাদন কমে যায়;
৬. রোগ বালাই বেড়ে যায়।
সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টির পদ্ধতিঃ
১. তাপ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে;
২. টিনের ঘর হলে সিলিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে;
৩. ঘরের উপর ছায়া তৈরি করতে হবে;
৪. ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করতে হবে;
৫. ঠান্ডা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাত্রে চটের পর্দা ব্যবহার করতে হবে;
৬. লিটার পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।
মুরগীর বাসস্থান নির্মাণ প্রস্ততি এবং ঘরের বৈশিষ্ট্যঃ মুরগীর ঘরের প্রকৃতি উন্মুক্ত বা দো চালা ঘর:
১. ঘরের অবস্থান: উত্তর-দক্ষিণমুখী;
২. ভিতরে: এক দেড় ফুট উঁচু, বেলে দো-আঁশ মাটি;
৩. মেঝে: পাকা হতে হবে;
৪. আয়তন: মুরগির জাত ও সংখ্যানুযায়ী;
৫. প্রস্থ: ৩০ ফুটের মধ্যে;
৬. দৈর্ঘ্য: প্রয়োজন ও সুবিধানুযায়ী;
৭. দূরত্ব: একটি হতে অপরটির দূরত্ব ঘরের প্রস্থের কমপক্ষে দেড় গুণ;
৮. উচ্চতা: পার্শ্ব উচ্চতা ৭ ফুট, মধ্য উচ্চতা ১২ থেকে ১৪ ফুট (দু’চালা ঘরের);
৯. চালা: কাঁচা, পাকা, টিনের। টিনের হলে সিলিং থাকতে হবে। বৃষ্টির ছাট ঝাপ্টা রোধে ঘরের চালা নীচের দিকে বাড়িয়ে দিতে হয়;
১০. বেড়া বা দেয়াল: ভিতর হতে উপরে এক ফুট বদ্ধ দেয়াল বা বেড়া, বাকি অংশ শক্ত তারের জাল দ্বারা করতে হবে;
১১. খাঁচা পদ্ধতির ঘর হলে সম্পূর্ণ তারের নেট বা জাল দ্বারা করতে হবে;
১২. ব্রুডার ঘর হলে ভিতরের উপর ৩ থেকে ৪ ফুট আবদ্ধ বেড়া এবং বাকি অংশে তারের নেটের তৈরি; ১
৩. ঘর তৈরির উপকরণ: সামর্থ অনুযায়ী ইট, সিমেন্ট, রড, টিন, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি।
পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘর এই ঘরে কৃত্রিম উপায়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেমন- বাতাস চলাচল ব্যবস্থা করা; প্রয়োজনে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা; তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করা; ঘরের ভেতর আলোর ব্যবস্থা করা; রোগ সংক্রমণ প্রতিকার ব্যবস্থা করা; কেনদ্রীয়ভাবে ঔষধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা। অধিক উচ্চতার ঘর: এই ঘর উন্মুক্ত অথবা পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
No comments
If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.