সুপার-ঘূর্ণিঝড়-আম্পান!

  • ব্রেকিং নিউস

    বাজেরিগার পাখি পালন, পরিচর্যা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা

    বাজেরিগার পাখি (Melopsittacus undulatus) সাধারন প্যারাকিট গোত্রের পাখি।এদের  Love Bird ভাবলেও এরা লাভ বার্ড নয়। এদের আকৃতি ছোট, লম্বা লেজ বিশিষ্ট, দানাদার খাদ্য গ্রহণকারী টিয়া জাতীয় পাখি। এরা মূলত অস্ট্রেলিয়ার পাখি হলেও এখন গোটা বিশ্বে খাঁচায় পালিত হচ্ছে। 


    ১৮০৫ সালে পাখি টি প্রথম সনাক্ত করা হয় এবং এই পাখিটি বিশ্বে ৩য় পোষা প্রাণি হিসেবে স্বীকৃত। 
    গঠন:  বাজেরিগার পাখি বিভিন্ন রং এর হয়।এরা লম্বায় ৭ ইঞ্চি, গড় ওজন ৩০-৪০ গ্রাম এবং লেজ প্রায় ১০ সে. মি. লম্বা হয়ে থাকে।
    বাসস্থান: বাজেরিগার পাখি বন্য পরিবেশে মূলত গাছের ডালে ঘর করতে পছন্দ করে। কিন্তু পোষা পাখি হিসেবে এর জন্য ভাল পরিবেশ দরকার। খাঁচার আকৃতি ২৪*২৪*১৮ ইঞ্চি হতে হবে। ভেতরে একটি খাদ্য পাত্র ও একটি পানির পাত্র দিতে হবে। ডিম পাড়ার জন্য ও বাচ্চা ফুটানোর জন্য মাটির হাঁড়ি প্রদান করতে হবে। ডিম পাড়ার অাগে হাড়িতে ধানের কুড়া বা ভূষি বা তুষ দিতে হয়।
    Image result for বাজরীগার পাখি পালন

    বাজরীগার (Budgerigar) খাঁচা ও উপযুক্ত পরিবেশঃ

    পাখি সংগ্রহ করার পূর্বে যে ৩ টি বিষয় খেয়াল করতে হবে,
    (১) সঠিক মাপের খাঁচা সংগ্রহ করা।
    (২) যে স্থানে খাঁচা রাখা হবে সেই জায়গার পুরো নিরাপত্তা।
    (৩) স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও উপকরন সরবরাহ নিশ্চিত করা।


    এবং পর্যাপ্ত পরিমানে আলো-বাতাসের বাবস্থা থাকতে হবে। অন্যথায় বড় টিউব লাইট বা এনার্জি সেভিংস লাম্প এর বাবস্থা করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমানে আলো সরবরাহ করার জন্য। এই আলো অনধিক রাত ৮ টা পর্যন্ত জ্বালিয়া রাখা যাবে। ব্রিডিং সিজনে পাখি ঘরের তাপমাত্রা ২০-২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস সবচেয়ে ভালো। টিক এই ভাবে গরমে কম স্পীডে বাতাসের বাবস্থা থাকতে হবে। পাখি ঘরের এক দিক দিয়ে বাতাস ঢুকে যেন অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। যদি তেমন না থাকে তাহলে ভেন্টিলেশন ফ্যান লাগিয়ে রাখতে হবে ও লক্ষও রাখতে হবে পাখি ঘরের তাপমাত্রা ৩০-৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপরে না হয়।


    ব্রিডিং: বাজেরিগার পাখি গড়ে ৬-৮ টি ডিম দেয়।তবে ছোট বা প্রথম দিকে ৪-৫টি এবং একটু বয়স হলে ১০-১২টি পর্যন্ত ডিম দেয়। ৮ মাস বয়সে পরিপূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হয়। সাধারনত মেয়ে পাখি ডিমে তা দেয় এবং রাতে হাঁড়ি থেকে বের হয় না। এদেরকে ডিম দেওয়ার জন্য মাটির হাঁড়ি প্রদান করতে হয়। কবুতরের মত উন্মুক্ত জায়গায় বাসা বানায় না। 
    খাদ্য: চিনা, কাউন, মিলেট, গুজি তিল, তিশি, ধানসহ বিভিন্ন উপকরণ খাওয়ানো যায়। এর পাশাপাশি শাক সবজি ও এদের প্রিয় খাবার- শাক, গাজর, ফল ইত্যাদি খাওয়ানো যায়।একটি পাখি দিনে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম খাবার গ্রহন করতে পারে।
    এরা প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করে থাকে । তাই সারাক্ষণ পানি ব্যবস্থা করতে হবে । এরা প্রতিদিন গোসল করতে পছন্দ করে । লাভ বার্ড অলস প্রকৃতির ও শান্তি প্রিয় পাখি , তাই এদের খুব নিরিবিলি পরিবেশে রাখতে হয় । 
    বাজরিগার এর গৃষ্মকালীন খাদ্য তালিকায় যেসব শস্যদানা রাখা যায় তার ৫ কেজি খাবারের মিশ্রণের উপকরণ এবং পরিমাণ ।
    ৫ কেজি সিডমিক্স এ যা যা থাকতে পারে-
    ১। কাউন-৩ কেজি
    ২। চিনাঃ ০.৫ কেজি
    ৩। গুজি তিলঃ ০.২৫ কেজি
    ৪। ধানঃ ১ কেজি
    ৫। ক্যানারি সিডঃ ০.২৫ কেজি
    এগুলার বাইরে অন্যকিছু দরকার নেই , সূর্যমুখির বীজ বারজিগার কে দেয়া উচিত নয় কারণ এটা বাজরিগারের এর শরীরে ফ্যাট বাড়ায় এবং অস্বাস্থ্যকর।
    অন্যান্য খাবারঃ
    সিদ্ধ ডিম,পালং শাক,কলমি শাক,বরবটি,মটরশুটি,গাজর,আপেল এগুলা কাচা দেয়া যায় মাঝে মাঝে । মাঝে মাঝে খাটি মধু এবং ঘৃতকুমারির শাস পানিতে মিশিয়ে দিতে পারেন ।
    পরিচর্যা: বাজেরিগার পাখি খুব আন্তরিক পাখি। এদেরকে প্রতিদিন দুইবার করে পানি ও খাদ্য প্রদান করতে হবে। পায়খানা দুই দিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন দুইবার করে জীবানুনাশক ছিটাতে হবে।

    অার ও পড়ুন- বাজরিগারের বাচ্চা জন্মানোর পর করনীয়


    কৃমিনাশক প্রদান: পাখিকে ৩ মাস বয়সে প্রথম কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে। এবং প্রতি ৩ মাস পরপর কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে।
    রোগবালাই প্রতিরোধ ও প্রতিকার: বাজেরিগার পাখি বিভিন্ন ধরনের রোগ হয় যেমন: রানিক্ষেত, সালমোনেলসিস, কলেরা, টাইফয়েড, সিটাকোসিস, বিক এন্ড ফিদার রোগ ইত্যাদি। এই সমস্ত রোগ থেকে বাঁচার উপায় হলো খামারের ভাল পরিচর্যা করা। অসুস্থ হলে দ্রুত ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়া। “করবো মোরা বাজেরিগার পালন, ভরবে আমার মন -প্রাণ, উন্নয়নের সোপান, হওরে যোয়ান আগুয়ান, আমরা আনবো আর্থিক উন্নয়ন।”
    তাহলে এবার  কি অাপনি শখ করে বাজরীগার পাখি পালতে চান?
    ১। বড় আকারের  একটা খাঁচা কিনেন , তারপর ভালো একজন ব্রিডারের কাছ থেকে কিছু বাজরীগারের বাচ্চা কিনুন। 
    ২। এরা কি খায়, এদের ভালো রাখার টিপস, এগুলো উপর থেকে স্টাডি করতে পারেন বা অারোও বিস্তারিত জানতে নেট থেকে বই ডাউনলোড করে স্টাডি করে নিবেন। 
    ৩। আপনার আশে পাশের একজন ভালো ব্রিডারের মুরিদ হন। 
    ৪। বাজরীগারের বয়স ৮ মাস হলে আলাদা কেস কিনুন , প্রতি পেয়ার এর জন্য একটা করে , তারপর ব্রিডিং মুডে আসলে হাঁড়ি দিন। 
    ৫। যারা সৌখিন বাজরীগার পালক, তাদের সাথে সূ-সম্পর্ক রাখেন। 
    ৬। বাজরীগার পালনকে একটা আর্ট হিসেবে নিন, বাজরীগারকে টেম করেন। 
    ৭। নবীন পাখী পালকদের আপনার অভিজ্জতা, আপনার মুল্যবান টিপস দিয়ে সাহায্য করুন, আপনার নিজ থেকে কিছু ভালো জাতের পাখী স্বল্প দামে দিয়ে সাহায্য করুন। 
    ৮। বাজরীগারেরা অসাধারণ পাখী, তা সবাইকে জানান, এদের ভালো বাসুন। 
    ৯। মিউটেশন জেনে বাজরীগার পালুন। 
    ১০। মিউটেশন জেনে ব্রিডিং করুন।
    তাহলে এক বাজরীগার সফল পালকের অভিজ্ঞতা শোনা যাক,
    ১৬ মাসে আমার বাজরীগার একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ল আমি কি কি করেছিঃ
    (১) সকালে ঘুম থেকে উঠে পাখিকে নিরাপদ পানি “ ওয়াটার ফিডারে” করে দিয়েছি। এক জোড়া বাজ্জি এর জন্য একটু উঁচু করে ২ চা চামচ সিড মিক্স, পাখিকে ক্ষিদে লাগিয়ে খেতে দিই। আমার কোন উদ্বৃত্ত খাবার থাকে না। সব খেয়ে ফেলে। আমি জানি আমার পাখি কতটুকু খায়।
    (২) যে দিন সফট ফুড পাখিকে দিই সেই দিন আগে সফট ফুড খেতে দিই। ২ ঘণ্টা রেখে সরিয়ে ফেলি। পরে সিড মিক্স খেতে দিই।
    (৩) সপ্তাহে ২ দিন গ্রিন ফুড পাখিকে দিই। যেমন ধনে পাতা অল্প করে।
    (৪) কেজ এর ট্রে দুই দিন পর পর বদলে দিই।
    (৫) পানির সাথে সপ্তাহে ৫ দিন (ACV)দেই আমি জানি প্রতিদিন (ACV) পাখির পুপ শক্ত হয়ে যায়। আমি জানি কি ভাবে পায়খানা নরম করতে হয়। আমি পাখিকে সফট ফুড দেই, ঠিক হয়ে যায়।
    (৬) আমি যখন বাহিরে থাকি … দিনে অন্তত একবার আমার পাখির খোঁজ খবর নেই , মা অথবা স্ত্রীর কাছ থেকে।
    (৭) আমার যে দিন শীত লাগে আমি ভাবি আমার পাখিরও শীত লাগছে, তখন তাদের কেজের পাশে লাইট জ্বালিয়ে দেই। যে দিন আমার গরম লাগে সে দিন আমার পাখিকে পানি দিয়ে স্প্রে করি। স্যালাইন খেতে দেই বা পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে দেই।
    (৮) মিনারেল ব্লক ও ক্যাটল বোন ছাড়া অন্য কিছু আমি দেই না। যেমন, গ্রিট।
    (৯) আমি সিড মিক্স বাজার থেকে কিনে আনি তারপর ভালো করে পানিতে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে তারপর পাখিকে খেতে দেই।
    (১০) রাতে বাসায় আসলে আগে পাখি দেখি তার সিড মিক্স লাগলে অল্প করে সিড মিক্স দেই, আর শীতকালে মোটা কাপড় আর গরমকালে পাতলা কাপড় দিয়ে কেজ ঢেকে দেই। এবং পট ও ওয়াটার ফিডার বের করে দেই। এটা আমার পাখি পালার স্টাইল , আপনি এটাকে ল’ বা আইন হিসেবে দেখবেন না।
                                                                                   -সুলতান বাবু ,বাজরিগার সোসাইটি অভ বাংলাদেশ


    বাজরিগার জোড়া নিতে না চাইলে করণীয়

    প্রথমে দেখুন আপনার মেল-ফিমেল এর ব্রিডিং এর প্রবনতা আছে কিনা। সাধারণত আমরা ব্রিডিং এর আগ্রহ বুঝতে ব্রিডিং মুড কে মুল চাবিকাঠি হিসেবে ধরে নেই । ( ব্রিডিং মুডঃ ফিমেলের নাক খয়েরি ও মেলের নাক গাঢ় নীল থাকবে। ) এছাড়াও , ব্রিডিং মুড না থাকা অবস্থায়ও কিছু কাজ দেখলে তার ব্রিডিং করার আগ্রহ সম্পর্কে বোঝা যায় । যেমনঃ মাথা অনবরত উপর-নীচ করা , সঙ্গীর সাথে মেটিং এর চেষ্টা করা , পাশের খাঁচার বাজির সংস্পর্শে আসতে চাওয়া , উচ্চ স্বরে ডাকাডাকি করা ইত্যাদি । যদি , তাদের মধ্যে এই প্রবনতা গুলো দেখতে না পান তাহলে অপেক্ষা করুন। যদি আপনার মেল-ফিমেল বাজির মধ্যে যেকোনো ১ টির ব্রিডিং এর প্রবনতা থাকে তাহলে নিচের স্টেপ গুলো ট্রাই করুন- 
    ১/ মেল ফিমেল কে আলাদা করে ১৫-২০ দিন পাশাপাশি ২ টা খাঁচায় রাখুন। একসময়ে তাদেরকে এগফুড সহ ভালমানের পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন । শেষের ৫ দিন “ই সেলেনিয়াম প্লাস” খাওয়াবেন পানির সাথে। মেল এর খাঁচায় লাল পাকা মরিচ রাখা যেতে পারে তার চাঞ্চল্য বাড়ানোর জন্য ।
    ২/ ১৫-২০ দিন এভাবে রাখার পর আবার এক খাঁচায় দিন। ৭ দিন অপেক্ষা করুন, লক্ষ্য করুন পেয়ার নিয়েছে কিনা। (অপেক্ষা করাটা গুরুত্বপূর্ণ, অনেক বাজি ১০ মিনিটে পেয়ার নেয়, আবার কিছু ৭ দিনের শেষ দিনে। তবে বেশিরভাগ ই ৭ দিনের মধ্যেই পেয়ার নেয়) ।তবে , তারা যদি একসাথে হওয়ার পর অনেক মারামারি করে তবে ২ টাকে আলাদা করে দেবেন ।
    ৩/ তাও যদি , পেয়ার না করে তাহলে বুঝতে হবে মেল-ফিমেল একজনকে অন্য জনের পছন্দ না বা তাদের মধ্যে যেকোনো একজনের এখন ব্রিডিং এর প্রয়োজন নেই । তখন একটা বড় খাঁচায় ( ৩৬*১৮*১৮ হলে ভালো) ওই মেল-ফিমেল এবং আর কিছু সিঙ্গেল মেল-ফিমেল কে ৪-৫ দিন রাখা যেতে পারে । একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে ওদের মধ্যে কেউ পেয়ার নিলে পাশাপাশি অবস্থান করবে , একজন কে অন্য জন খাইয়ে দেবে , মাথা চুলকিয়ে দেবে।
    ৪/ যদি তাও না করে তাহলে ফিমেলদেরকে ২-৩ মাসের জন্য আলাদা খাঁচায় রাখা যেতে পারে । এমনভাবে রাখতে হবে যাতে তারা অন্য পেয়ারগুলোকে দেখতে পায় । আশা করা যায়, ২-৩ মাস সিঙ্গেল থাকলে তাদের ব্রিডিং এর প্রবণতা ফিরে আসবে। তখন আবার তাদেরকে পেয়ার করানো যাবে ।


    প্রতিবার ব্রিডিং এর পর অবশ্যই পাখিদের বিশ্রামে দেওয়া উচিতঁ
    ১। ৪-৫টা বাচ্চা খাওয়ানো দেখতে খুব সহজ মনে হলেও, এইতা কিন্তু অনেক কঠিন একটা কাজ।
    ২।সম্পূর্ণ ব্রিডিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে (ডিম পারা থেকে শুরু করে বাচ্চা বড় করা পর্যন্ত) পাখিদের শরীরের প্রচুর ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, মিনারেল এর ঘাটতি তৈরি হয়। তা সম্পূর্ণ রুপে আবার পাখি এর শরীরে তৈরি হতে কমপক্ষে ২মাস সময় লাগে। এই ঘাটতিটা ফিমেল এর ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।
    ৩। প্রত্যেকবার ব্রিডিং এরপর কম পক্ষে ২মাসের বিশ্রাম, নানান ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ থেকে আমাদের প্রিয় পাখিদের রক্ষা করবে।
    আরেকটা বিষয় শুধুমাত্র বিশ্রামে দিলে হবে, বিশ্রামে থাকাকালিন অবশ্যই তাদের পুষ্টিকর খাবার দিন। রেগুলার পাখিদের virkon-s অথবা অন্য কোন জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করুন।
    একটা কথা অামাদের সব সময় মাথায় রাখা উচিত,” আমাদের আদরের বাজরীগার পাখি গুলো ব্রিডিং মেশিন না, তাই এদের যত্ন নিন।

    No comments

    If you have any doubt, please let me know that with your valuable comments.

    পৃষ্ঠা

    সর্বশেষ খবর

    COVID-19 থেকে বাঁচার উপায় !